আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের জের, একধাক্কায় অনেকটাই কমল চিনের আর্থিক বৃদ্ধির হার


কমিউনিস্ট সরকারের উদ্বেগ বাড়িয়ে এক ধাক্কায় অনেকখানি কমে গেল চিনের আর্থিক বৃদ্ধির হার। ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে বড় চাপ তৈরি হল বলে মনে করছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা। এই ব্যতিক্রমী আর্থিক মন্দার ঘটনাকে অশনি সংকেত হিসাবেই দেখছেন চিন সরকার। চিনা পণ্যের লাগাতার বাজার হারানো এবং আমেরিকার সঙ্গে চলতি বাণিজ্য সংঘাতকেই এজন্য দায়ী করছে ওয়াকিবহাল মহল।

কিন্তু চিনা অর্থনীতিবিদদের মতে, সদ্য শেষ হওয়া আর্থিক বছরে বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬.৬ শতাংশে। যা বিগত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। এই ঘটনা এক দিনে হয়নি। গত দুই বছর ধরেই ভারী শিল্প, প্রযুক্তি ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছে চিন। কিন্তু নিত্য নতুন বাজার ও বিক্রির ক্ষেত্র তৈরি করতে পারেনি। চিনের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনবিএস) সোমবার এক রিপোর্টে জানিয়েছে, ২০১৭ সালে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল, ৬.৮ শতাংশ। তার চেয়েও কমে বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬.৬ শতাংশে। ১৯৯০ সালে চিনের আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে কম (৩.৯ শতাংশ)। অর্থাৎ ২০১৮ সালের আর্থিক বৃদ্ধির হার হল গত ২৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এই ঘটনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের OBOR (ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড) নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে. কারণ আর্থিক বৃদ্ধি একবার কমতে থাকলে তার জের চলতে পারে তিন থেকে পাঁচ বছর।

আর্থিক বৃদ্ধির এই হার ধাক্কা খাওয়ায় তার জের পড়েছে সাংহাই ও হংকংয়ের শেয়ার বাজারে। শেয়ার সূচক পড়েছে হু হু করে। ফলে আমেরিকার বিরুদ্ধে চলতি বাণিজ্য যুদ্ধে এখন বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে শি জিনপিংয়ের চিন। তাই পরিস্থিতির চাপে পড়ে কিছুটা হলেও ওয়াশিংটনের দিকে আপসের হাত বাড়িয়েছে বেজিং। এজন্য তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্পের সংস্থার নামে ৫টি ট্রেডমার্ক মঞ্জুর করেছে। চিনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, যেহেতু ট্রাম্প চিনের সঙ্গে বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে অবস্থান নরম করেছেন এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের দিকে এগোচ্ছেন, তাই চিনও তাদের অবস্থান নমনীয় করছে। চিনের অনলাইন ট্রেডমার্ক অফিসের রেকর্ড বলছে, রবিবার চারটি মার্কিন পণ্যকে ট্রেডমার্ক মঞ্জুর করে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এগুলি হল, ইভাঙ্কা ট্রাম্পের কোম্পানিতে উৎপাদিত শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রসাধনী পণ্য, সানগ্লাস ও বিয়ের পোশাক, আর্টের জিনিস, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তহবিল গঠন, প্রচারের কাজকর্ম ও মেধাস্বত্ব।

অন্যদিকে, স্বাধীনতার দাবিকে কেন্দ্র করে তাইওয়ান আর চিনের বিবাদ চরমে উঠল। আগেই চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং হুমকি দিয়েছিলেন, তাইওয়ানকে স্বাধীনতার স্বপ্ন ভুলে চিনের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। স্বাধীনতার দাবিতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের হুমকি দিয়ে পালটা সুর চড়িয়েছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট। তাঁর আপত্তি উড়িয়ে সমুদ্র সীমান্তে সেনা মোতায়েন শুরু করে দিয়েছে চিন। এদিকে, এক দম্পতির দুই সন্তান নীতি ঘোষিত হওয়ার পরও চিনে জন্মহার বাড়েনি বলে জানানো হয়েছে সরকারি রিপোর্টে। জনবিস্ফোরণ রুখতে কঠোরভাবে এক দম্পতির এক সন্তান নীতি কার্যকর করেছিল চিন সরকার। তাতে দেশে জন্মহার কমে গিয়েছে।