এবার ফুসফুস প্রতিস্থাপন SSKM হাসপাতালে ?


কিডনি, লিভার ও হার্টের পর এবার ফুসফুস প্রতিস্থাপনও হওয়ার সম্ভাবনা SSKM হাসপাতালে। এর জন্য পরিকাঠামো তৈরির কাজ প্রায় শেষ বলে জানা গেছে। পূর্ব ভারতে এই প্রথম ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য শিগগিরই তারা লাইসেন্স পেতে চলেছেন বলে আশায় SSKM হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরকারি এই হাসপাতালে কিডনি এবং লিভার প্রতিস্থাপন হয়েছে অতীতে। এবার ফুসফুস প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনা। তবে শুধু ফুসফুস প্রতিস্থাপন নয়, হার্ট প্রতিস্থাপনের জন্যেও SSKM হাসপাতাল শিগগিরই লাইসেন্স পেতে পারে বলে আশায় কর্তৃপক্ষ।

হার্ট প্রতিস্থাপনের জন্য গতবছরের আগাস্ট মাসে আবেদন জানিয়েছিল SSKM হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই আবেদনের ভিত্তিতে চলতি মাসেই হার্ট এবং ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য লাইসেন্স পেয়ে যাবে বলে মনে করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

এখনও পর্যন্ত এরাজ্যের ৫টি হাসপাতাল হার্ট প্রতিস্থাপনের লাইসেন্স পেয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে রয়েছে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এরপর, ফুসফুস এবং হার্ট প্রতিস্থাপনে যাতে সফল হতে পারে তারা, তার জন্য SSKM হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তৎপর বলে জানা গেছে। 

কিন্তু, ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে গোটা দেশের অবস্থা এখন কেমন? IPGME&R কলকাতার কার্ডিও-থোরাসিক অ‍্যান্ড ভাস্কুলার সায়েন্সেস (CTVS)-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর দীপায়ন ঘোষের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "আমাদের রাজ্যে ফুসফুস প্রতিস্থাপন এখনও আক্ষরিক অর্থে ভ্রূণের পর্যায়ে রয়েছে। কারণ এখন আমরা সরকারি স্তরে আমাদের রাজ্যে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন দেখেছি। ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ব্যাপারটা আমরা এখনও সেইভাবে শুরু করতে পারিনি। তবে সেই লক্ষ্যে আমাদের অগ্রগতি চলছে। এবং, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই ব্যাপারটা আমরা নিশ্চিত একটা পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব বলে আমার ধারণা।" তবে, একই সঙ্গে তিনি বলেন, "সরকারি স্তরে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে কাজকর্ম চলছে। আশা করছি খুব শিগগিরই এই পরিষেবা চালু করতে পারব। ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য পরিকাঠামো সম্পূর্ণ হওয়ার কাজ কিছুটা বাকি রয়েছে।" দেশের অন্যত্র সরকারি হাসপাতালে এর আগে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের খবর সেভাবে পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ ভারতের বেসরকারি কয়েকটি হাসাপাতালে এই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 

কোন কোন ক্ষেত্রে ফুসফুস প্রতিস্থাপন জরুরি? এই বিষয়ে দীপায়নবাবুর বক্তব্য, যে ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের কথা ভাবা হয় তাঁদের অধিকাংশের রয়েছে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি এয়ারওয়ে ডিজিজ় (COPD)। আর, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সিস্টিক ফাইব্রোসিস এবং হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত কিছু সমস্যায় ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয়। এপ্রসঙ্গে দীপায়নবাবু আরও বলেন, "ফুসফুসকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় এরকম কিছু অবস্থা রয়েছে। সে সব ক্ষেত্রে আমরা ফুসফুস প্রতিস্থাপনের কথা চিন্তা ভাবনা করি। বড়দের ক্ষেত্রে COPD, ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আমরা ফুসফুস প্রতিস্থাপনের কথা ভাবা হয়।"

ফুসফুস প্রতিস্থাপনের বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে দীপায়নবাবু বলেন, "এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক হিসাবে যে দায়িত্ব থাকবে তা হল, যথাযথ গ্রহীতাকে বেছে নেওয়া। অর্থাৎ, কার ক্ষেত্রে ফুসফুস প্রতিস্থাপন করে সর্বাধিক পরিমাণে সফল চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পারব। এর জন্য, যাঁকেই পেলাম তাঁকেই অস্ত্রোপচার করে ফেললাম, এই ব্যাপারটা না করে স্ক্রিনিং অর্থাৎ, রোগী বাছাইয়ের ব্যাপারে অনেক বেশি জোর দেওয়া উচিত।" এপ্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, গোটা বিশ্বে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সাফল্যের হার সেভাবে আশাব্যঞ্জক নয়। তাঁর কথায়, "সেরা প্রতিষ্ঠানেও এখনও পর্যন্ত সফল ফুসফুস প্রতিস্থাপনের হার ৩০ শতাংশের মতো। সাফল্যের এমন হারের বিষয়ে দ্বিমতও থাকতেও পারে। তুলনায় সফল হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের হার অনেক ভালো।"

সাফল্যের হার কেন সেভাবে আশাব্যঞ্জক নয়? দীপায়নবাবু বলেন, "ফুসফুস প্রতিস্থাপনের প্রতিটি পদক্ষেপে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। গ্রহীতার শরীরে প্রতিস্থাপিত হাওয়া ফুসফুস বাতিলের আশঙ্কাও রয়েছে। হার্ট, লিভার এবং কিডনি, এই তিন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হল লিভার।" কিডনির মতো ফুসফুসও কি একটি প্রতিস্থাপিত হয়? তিনি বলেন, "দুটি ফুসফুস একসঙ্গে প্রতিস্থাপনের বিষয়টি জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। চিকিৎসকরা এখন একটি ফুসফুস প্রতিস্থাপনের উপরে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেন।" একই সঙ্গে তিনি অবশ্য বলেন, "ফুসফুসের একটি অংশ প্রতিস্থাপনের বিষয়টি তুলনায় অনেক বেশি সফল।"