এটিএমে টাকা তোলার পরই ‘ক্যানসেল’ বোতাম টিপুন, না হলে যা হবে…


ব্যাংকে অনলাইনে লেনদেন করার জন্য একেবারে আলাদা একটি অ্যাকাউন্ট খুলুন। ব্যাংক জালিয়াতদের কবলে পড়বেন না। এটিএম থেকে টাকা তোলার পর অবশ্যই 'ক্যানসেল' বোতাম টিপুন। এটিএম জালিয়াতদের হাত থেকে বাঁচবেন। কলকাতায় এসে শহরবাসীকে সতর্ক করলেন কেন্দ্রীয় সাইবার নিরাপত্তার কর্তা।

কলকাতায় সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি কোঅর্ডিনেটর ড. গুলশন রাই। সারা দেশ জুড়ে যখন তখন সাইবার অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে সাইবার অপরাধীরা, তার শিকার হচ্ছেন কলকাতাবাসীও। ড. গুলশন রাইয়ের মতে, 'আউটসোর্সিং'-এর সর্ষের মধ্যেই রয়েছে ভূত। যেখানে আউটসোর্সিং, সেখানেই সাইবার অপরাধ বাড়ছে। ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড থেকে শুরু করে এটিএমের দেখভাল ও তাতে টাকা ভরানোর কাজের ভার কোনও ব্যাংকই নিজের ঘাড়ে নেয় না। সেই দায়িত্ব 'আউটসোর্সিং' করে বেসরকারি কোনও সংস্থার উপর ভার দেওয়া হয়। সাইবার নিরাপত্তা কর্তা জানান, একটি এটিএম বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পর সংস্থার পক্ষে তার ভিতরে ঢোকা সহজ হয়ে যায়। সেটিই বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, জাল নোট চক্রও বহুবার এই ধরনের বেসরকারি সংস্থাকে কাজে লাগিয়েছে। চক্রের মাথারা টাকার টোপ দিয়ে এটিএমের ভিতর ঢুকিয়েছে জাল নোট। সেই জাল নোট অনেক গ্রাহকের হাতে এসেছে। বিভিন্ন সময়ে কলকাতা পুলিশের একাধিক থানায় এটিএম থেকে বের হওয়া জাল নোট জমাও পড়েছে। এ ছাড়াও এটিএমের যন্ত্রাংশের ব্যবহার ব্যাংকের আধিকারিকদের বদলে যথেচ্ছ করতে পারেন বেসরকারি সংস্থার কর্মীরাই। ওই এটিএম কর্মীদের মধ্যে কাউকে সাইবার অপরাধ চক্রের মাথারা কাজে লাগাতেই পারে বলে ধারণা দিল্লির ন্যাশনাল সাইবার কোঅর্ডিনেশন সেন্টারের কর্তার। সারা দেশে সাইবার অপরাধ রুখতে কেন্দ্রীয় সরকার তৈরি করেছে এই সংস্থাটি। অনলাইন লেনদেন চলাকালীনও হ্যাকার বা সাইবার অপরাধীরা জালিয়াতির সুযোগ নিতে পারে। ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি কোঅর্ডিনেটর জানান, অনলাইন লেনদেন চলাকালীন ডেবিট কার্ড জালিয়াতি করে তথ্য চুরির প্রবণতা থাকে সাইবার অপরাধীদের। এই বিষয়ে সারা দেশেই অভিযোগ হয়েছে। কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন থানায় প্রায়ই নানা পদ্ধতিতে কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের হয়।

ব্যাংকে অনলাইন লেনদেনের বিষয়ে সাইবার নিরাপত্তা কর্তা জানান, এই ধরনের লেনদেন করতে হলে গ্রাহকরা একই ব্যাংকে দু'টি অ্যাকাউন্ট খুললে জালিয়াতির সম্ভাবনা কমে যায়। একটি অ্যাকাউন্টে টাকা থাকুক। অন্য অ্যাকাউন্টে থাকুক অনলাইন লেনদেনের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু টাকাই। মূল অ্যাকাউন্ট থেকে না করে দ্বিতীয় অ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইন লেনদেন করলে বেশি টাকা জালিয়াতির থেকে বাঁচবেন গ্রাহক। একই সঙ্গে সতর্ক করে বলা হয়েছে, কোনও ব্যাংকের ওয়েবসাইট খুললে যেন গুগল বা কোনও সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্যে না খোলা হয়। ওয়েবসাইট সরাসরি খোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ব্যাংকের অনলাইন লেনদেন করার সময় প্রথমে বলা হচ্ছে ভুল পাসওয়ার্ড দিতে। যদি ভুল পাসওয়ার্ড ওয়েবসাইট গ্রহণ করে, তখন বুঝতে হবে যে, সেই সাইটটি জাল। এভাবে জাল ও আসল ওয়েবসাইটের পার্থক্যও বোঝা যাবে বলে জানিয়েছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।