সাজানো নাটক? ‘অপহৃত’ মেয়েকে উদ্ধারের পর বিজেপি নেতাকেই গ্রেফতার করল পুলিশ


এই প্রথমা বটব্যালকেই অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

লাভপুরে বিজেপি নেতার মেয়েকে অপহরণের ঘটনায় ওই নেতা সুপ্রভাত বটব্যাল-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃত তরুণী প্রথমা বটব্যালকেও। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গে ডালখোলা স্টেশনের কাছ থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে 'অপহৃত' তরুণীর সঙ্গেই পাওয়া গিয়েছে দুই 'অপহরণকারী' রাজু সর্দার এবং দীপঙ্কর মণ্ডলকে। দু'জনেরই বাড়ি দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়ি এলাকায়।

অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লাভপুরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুপ্রভাত বটব্যালের বাড়িতে একদল দুষ্কৃতী ঢুকে তাঁর মেয়েকে বন্দুক দেখিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন না সুপ্রভাতবাবু। আরও অভিযোগ, তিনটি মোটরসাইকেলে চড়ে এসেছিল দুষ্কৃতীরা।বিষয়টি চাউর হতেই থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে পৌঁছলে তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান মানুষ। সকাল হতেই ফের প্রতিবাদে পথে নামেন স্থানীয়রা। টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। চলে অবরোধ।
ওই ঘটনাকে ঘিরে গত দু'দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল লাভপুর এবং নানুর এলাকা। বিক্ষোভের মুখে পড়ে থানায় আশ্রয় নিতে হয় স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মণিরুল ইসলামকেও।

পুলিশের দাবি, গোটা অপহরণের ঘটনাটিই সাজানো। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময় সরকার বলেন,''রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ওই অপহরণের ঘটনা সাজানো হয়েছে।কারণ ধৃতদের সঙ্গে সুপ্রভাতবাবু একাধিক বার দেখা করেছেন এমন প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। এমনকি, অপহরণের একদিন আগে ১৩ ফেব্রুয়ারিও তিনি ধৃত,দের সঙ্গে দেখা করেন।''

রবিবার সুপ্রভাতবাবু এবং নকশালবাড়ি থানা এলাকার বাসিন্দা দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার পর তন্ময় সরকার বলেন, ''বাড়ি ঢুকে দুষ্ক়তীরা একটি মেয়েকে নিয়ে গেলে যে ধরনের বাধা অপহরণকারীদের পাওয়া উচিত সে রকম কোনও বাধার চিহ্ন তদন্তে পাওয়া যায়নি। কেউ কোনও চিৎকার বা কোনও আওয়াজ পাননি। সেখান থেকেই আমাদের সন্দেহ তৈরি হয়েছিল।" ওই পুলিশ কর্তার দাবি, একটি পুরনো মামলায় অভিযুক্ত হিসাবে সুপ্রভাতবাবুই পুলিশের খাতায় 'ওয়ান্টেড' ছিলেন। সেই চাপটাও কাজ করেছে অপহরণের গল্প সাজিয়ে অন্যদিকে বিষয়টির অভিমুখ ঘোরাতে। তন্ময় সরকারের দাবি," অপহরণের ঘটনার পর গোটা এলাকা জুড়ে একটি সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে কিছু দুষ্কৃতী। তার পিছনেও তরুণীর বাবার মদত আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"

পুলিশ এদিন জানিয়েছে, ধৃতদের একজন গ্রিল কারখানার কর্মী এবং অন্যজন পেশায় রাজমিস্ত্রি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন," ১৩ তারিখ বুধবার বোলপুরে ওই দু'জনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তরুণীর বাবা সুপ্রভাত বটব্যাল। এরা সকলে পূর্ব পরিচিত। তবে ঠিক কী ভাবে এই তিনজনের আলাপ এবং ধৃত ওই দু'জনের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের যোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ''কতটা আজব পরিস্থিতি বাংলায় তৈরি হয়েছে ভাবুন! যাঁকে অপহরণ করা হল, তাঁর বাবাকেই পুলিশ গ্রেফতার করছে!'' বাংলায় আইন-শৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার ইচ্ছাও শাসক দলের নেই— দাবি রাজ্য মহিলা মোর্চার সভানেত্রীর।  জেলা বিজেপির সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেছেন, ''এটাই তো হওয়ার ছিল। যে কোনও অপরাধ ঘটলেই তো এখন বিজেপির নামে দোষ দেওয়া হয়।''