পিজির আউটডোরের ভিড় এড়াতে অনলাইনে টিকিট


বড় সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর ক্ষেত্রে রোগী-পরিজনের বড় মাথাব্যথা লম্বা লাইন। সে সমস্যার সমাধানে এ বার অভিনব পদক্ষেপ রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের। টিকিটের লাইন এড়িয়ে আউটডোরে ডাক্তার দেখানোর দরজা খুলল এবার ইন্টারনেটে। আগেভাগে অনলাইনে আউইটডোর টিকিট কাটা যাবে আজ, শুক্রবার থেকেই। তবে আপাতত শুধু পিজি ও তার অ্যানেক্স হাসপাতালগুলিতে। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, 'বৃহস্পতিবার থেকেই পোর্টালটি খোলা। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এখন পরিষেবাটি পিজি দিয়ে শুরু হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে আশা করছি সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই মিলবে এ সুবিধা।' চালু ব্যবস্থা অবশ্য থাকছেই। অর্থাৎ আউটডোরে লাইন দিয়ে টিকিট করানো।
স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, এমন সুসংহত ব্যবস্থা দিল্লির এইমস বাদে দেশে আর কোথাও তেমন নেই। ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজে এ ব্যবস্থা আছে বটে। তবে রোজকার আউটডোর নয়, তা শুধুমাত্র স্পেশ্যাল ক্লিনিকের অ্যাপয়েন্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বেসরকারি ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অনলাইন আউটডোর টিকিট কাটার ব্যবস্থা থাকলেও সে সুবিধা বিক্ষিপ্ত। পিজি-র ক্ষেত্রে যা চালু হল তেমন নজির রাজ্যে তো বটেই, দেশেও এইমস বা ভেলোর ছাড়া আর কোথাও নেই।

পিজি-র কর্তারা জানাচ্ছেন, এই প্রতিষ্ঠানের অধীন এসএসকেএম, বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস (বিআইএন), ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি (আইওপি) এবং শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল মিলিয়ে দৈনিক প্রায় ১১ হাজার রোগীর ভিড় হয় আউটডোরে। ফলে ডাক্তার দেখাতে গেলে দেড়-দু' ঘণ্টা টিকিটের লাইনে দাঁড়াতেই হয় সকলকে। অনলাইন ব্যবস্থায় সেই ভিড় যেমন এড়ানো যাবে, তেমনই বিকল্প এই ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে গেলে তার জেরে রোজকার লাইনের দৈর্ঘও ছোট হতে বাধ্য। তবে আইওপি আর শম্ভূনাথের জন্য অনলাইনে টিকিট কাটা যাবে কয়েক দিন পরে।
কী ভাবে অনলাইনে টিকিট কাটতে হবে? পিজি-র এক প্রশাসনিক কর্তা জানান, রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইটেই (www.wbhealth.gov.in) রয়েছে সে ব্যবস্থা। ওই পোর্টালের বাঁ দিকে ই-গভর্ন্যান্স কলামে রয়েছে 'ওপিডি টিকিট বুকিং'-এর বাটন। সেখানে ক্লিক করলে যে উইন্ডো খুলবে, সেখানে নিজের মোবাইল নম্বর রেজিস্টার করে এবং একটি ফর্ম পূরণ করে কাটা যাবে নির্দিষ্ট বিভাগের প্রয়োজনীয় তারিখের আউটডোর টিকিট। সাধারণ আউটডোর টিকিট কাটতে দু' টাকা লাগলেও অনলাইনে কোনও টাকা লাগবে না। যে দিন ডাক্তার দেখানোর কথা, তার সাত দিন আগে থেকে ওই দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত টিকিট কাটার 'অপশন' খোলা থাকবে। অনলাইনে কাটা টিকিটের প্রিন্ট-আউট নিয়ে পিজি-র নির্দিষ্ট কাউন্টারে (ওএন-১১ থেকে ওএন-২৪) গেলেই বার-কোড স্ক্যান করে ওই টিকিটে স্ট্যাম্প দিয়ে দেবেন কর্মীরা। সেটি নিয়ে সরাসরি আউটডোরে পৌঁছে ডাক্তার দেখানো যাবে। পিজি-র কর্তারা জানাচ্ছেন, ওই কাউন্টারে বার-কোড স্ক্যান করানোর জন্য সাধারণ লাইনের পিছনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই।

স্বাস্থ্য মহল মনে করছে, অভিনব এই পদক্ষেপ সব অর্থেই বেনজির। পিজি-র উপাধ্যক্ষ রঘুনাথ মিশ্র বলেন, 'এখন আর শুধু গরিব মানুষই নন, মধ্যবিত্ত, এমনকী কিছু ক্ষেত্রে ভালো ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে উচ্চবিত্তরাও পিজি-তে আসেন। কিন্তু সকলের ক্ষেত্রেই বিরাট লাইন একটা বড় বিরক্তির কারণ। বছর তিনেক আগে সব পরিষেবা ফ্রি হয়ে যাওয়ার পর থেকে সরকারি হাসপাতালে ভিড় বেড়েছে। ফলে টিকিটের লাইনও আগের চেয়ে ঢের লম্বা এখন। আমাদের বিশ্বাস, অনলাইন বিকল্প সেই লাইনের দৈর্ঘ কমাবে নিশ্চিত।' স্বাস্থ্যভবন অবশ্য রোগী-পরিজনের লাইনে দাঁড়ানোর সময় কমাতে কিছু দিন আগেও একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেছে। রেশন/খাদ্যসাথী কার্ডের বার-কোড স্ক্যান করার ব্যবস্থা চালু হয়েছে গত মাস থেকে। তার জন্য পৃথক কাউন্টারও তৈরি হয়েছে সব মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু প্রচারের অভাবে লোক সে কার্ড নিয়ে আসছেই না হাসপাতালে।