‌কন্যা সন্তানই বেশি দত্তক নেওয়া হচ্ছে এ দেশে, দাবি কেন্দ্রের


গত তিন বছরে এ দেশে যত শিশু দত্তক নেওয়া হয়েছে, তার ৬০ শতাংশই মেয়ে। দেশের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের পরিসংখ্যান এমনটাই দাবি করেছে। কিন্তু সেই সঙ্গেই উঠে এসেছে বিপরীত চিত্রও। এ কথা স্পষ্ট, যে কন্যাসন্তান পরিত্যাগের ঘটনা বেশি বলেই শিশুদের হোমগুলিতে তাদের সংখ্যাই বেশি। আর সেই সংখ্যারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে দত্তকের সংখ্যায়। ফলে কন্যাসন্তান দত্তক নেওয়ার প্রবণতা সেভাবে আশা জাগালেও, আসল সঙ্কটটা লুকিয়ে রয়েছে এর আড়ালেই। কন্যাভ্রূণ বা কন্যা সন্তান হত্যার মতো সমস্যায় জর্জরিত দেশ আসলে যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই আছে।

নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক মঙ্গলবার লোকসভায় একটি প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১১ হাজার ৬৪৯ জন পরিত্যক্ত বা অনাথ শিশু দত্তক নেওয়া হয়েছে দেশে। এদের মধ্যে কন্যা সন্তান ৬৯৬২ জন। ছেলে ৪৬৮৭ জন। ২০১৫–১৮ সালের মধ্যে বিদেশে দত্তক নেওয়া হয়েছে ২৩১০ জন শিশু। তাদের মধ্যে মেয়ে ১৫৯৪ জন। অর্থাৎ ৬৯ শতাংশ। দত্তকের বিষয়টি দেখাশোনা করার কেন্দ্রীয় সংস্থা 'সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি (সিএআরএ)'–এর এক সদস্যের অবশ্য মত, কন্যাসন্তানের প্রতি সমাজের বিরূপ মনোভাব যে বদলাচ্ছে, এটা তারই প্রতিফলন।

তবে পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে, মনোভাব বদলালে, এত মেয়ে নিজের মা–বাবার কাছে বড় হচ্ছে না কেন? দত্তক দেওয়ার মতো এত মেয়ে তবে আসছে কোথা থেকে। সূত্রের খবর, দত্তক নেওয়ার ব্যাপারে এখন যথেষ্ট কড়াকড়ি রয়েছে দেশে। দত্তক নেওয়ার পুরো ব্যবস্থাটাই এখন অনলাইনে হয়। আয়ের কোনও নিম্নসীমা না থাকলেও মোটামুটি শিক্ষিতদের পক্ষেই এই ব্যবস্থার সুবিধা নেওয়ার সুযোগ বেশি। ছেলে বা মেয়ে বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে অবশ্য।
অনেকেই মনে করছেন, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে মেয়ে সন্তান দত্তক নেওয়ার কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। প্রথমত, সমাজ সচেতনতা। মেয়ে সন্তান দত্তক নিয়ে বড় করে তুলে সামাজিক দায়িত্ব পালন হয় বলে মনে করেন অনেকেই। দ্বিতীয়ত, যে শূন্যতা বোধ থেকে দত্তক নেওয়া, তা মেয়েরাই বেশি পূরণ করতে পারবে বলে প্রত্যাশা রাখছেন মা–বাবারা। পরিসংখ্যানও বলছে, বৃদ্ধ বয়সে মেয়েরাই বেশি দেখশোনা করেন অভিভাবকদের। তবে পুত্রসন্তান চেয়েও, দীর্ঘ অপেক্ষা করতে চান না বলে পছন্দ বদল করে মেয়ে দত্তক নিয়েছেন, এমন উদাহরণও কম নয়।

তবে সে যে কারণেই হোক, দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যাটা বেশি মনে হলেও, তা আসলে কতটুকু? রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেব বলছে, ২০১১ সালে ভারতে অনাথ ও পরিত্যক্ত শিশুর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৯৬ লক্ষ। নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের সাহায্যপ্রাপ্ত সংস্থা চাইল্ডলাইন ইন্ডিয়ার হিসেব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সংখ্যাটা ছিল ৩ কোটির বেশি। তবে আসল সংখ্যাটা এর চেয়ে অনেক বেশি বলেই মনে করা হয়। এই বিপুল সংখ্যাক একলা শিশুর মধ্যে আশ্রয় মিলেছে সব মিলিয়ে ৪ লক্ষ ৭০ হাজার শিশুর। যা মোট শিশুর ১.৫৭ শতাংশেরও কম। এর পাশাপাশিই কেন্দ্রীয় সরকার জানাচ্ছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের এই তিন বছরে গড়ে ৩৮০০ জন শিশু দেশে বা বিদেশে কোনও পরিবার পেয়েছে। প্রতি ১ লক্ষে সংখ্যাটা ১২।