‘স্বামীর ইউনিফর্ম-স্টার পরেই স্যালুট জানাব’! সেনায় যোগ দেওয়ার আগে বললেন নিহত মেজরের স্ত্রী

সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন নিহত মেজরের স্ত্রী গৌরী মহদিক।

নিজে আইনজীবী। নামী সংস্থায় কোম্পানি সেক্রেটারির পদে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু সে সব ছেড়ে ভারতীয় সেনায় যোগ দিচ্ছেন গৌরী মহদিক। দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া মেজর স্বামীকে এ ভাবেই শ্রদ্ধা জানাতে চান স্ত্রী। সেনায় নিয়োগের 'সার্ভিস সিলেকশন বোর্ড' (এসএসবি) পরীক্ষায় শুধু উত্তীর্ণই হননি, গৌরী ওই পরীক্ষার টপার। এপ্রিলেই চেন্নাইয়ে সেনার প্রশিক্ষণে যোগ দিচ্ছেন। এক বছর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর লেফটেন্যান্ট পদে যোগ দেবেন তিনি। নিহত মেজর স্বামীকে স্যালুট জানাতে 'স্বামীর ইউনিফর্ম এবং স্টার পরেই ডিউটি' করবেন, জানালেন গৌরী।

মুম্বইয়ের তরুণী গৌরীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর মেজর প্রসাদ মহদিকের বিয়ে হয় ২০১৫ সালে। গৌরী তখন আইনজীবী এবং একটি নামি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। বিয়ের পর তিনি মুম্বইতেই শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে থাকতেন। কিন্তু ২০১৭ সালে তাঁদের জীবনে নেমে এল এক ভয়ানক দুর্ঘটনা। চিন সীমান্তে কর্মরত স্বামী মারা গেলেন অগ্নিকাণ্ডে। তার পর কিছু দিন শোকগ্রস্ত হলেও গৌরী তখন থেকেই ঠিক করে নেন, সেনাবাহিনীতেই চাকরি করবেন তিনি।

সেই ভাবনা বাস্তবায়িত করতেই চাকরি ছাড়লেন। শুরু করলেন পড়াশোনা। ওই বছরই নিহত জওয়ানের বিধবা স্ত্রী ক্যাটেগরিতে সেনায় নিয়োগের পরীক্ষা এসএসবি-তে বসেন। কিন্তু কৃতকার্য হননি। পরের বছর সেই পরীক্ষায় শুধু পাশ করাই নয়, ১৬ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে চাকরির সুযোগ পেয়েছেন গৌরী। চেন্নাইয়ে সেনাবাহিনীর অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে (ওটিএ) যোগ দেবেন এ বছরেরই এপ্রিলে। তার পর ৪৯ সপ্তাহের কঠোর পরিশ্রমসাধ্য প্রশিক্ষণ পর্ব শেষ করে যোগ দেবেন চাকরিতে। চাকরিতে যোগ দেবেন লেফ্টেন্যান্ট পদে।

স্বপ্ন সফল হওয়ার পর সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গৌরী বলেন, ''স্বামীকে সম্মান জানাতে আমি শপথ করেছিলাম, সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগ দেবই। স্বামীকে সম্মান জানাতে তাঁর ইউনিফর্ম এবং বুকে যে সব স্টার ছিল, সেগুলি পরেই ডিউটিতে যোগ দেব। তখন সেই ইউনিফর্ম হবে 'আমাদের'। 'আমাদের', কারণ একই ইউনিফর্ম আমি এবং আমার স্বামী পরব।''

চাকরি পেয়ে সম্মান জানাতে পারবেন, এটা ভেবেই স্বামীকে আরও বেশি করে মনে পড়ছে গৌরীর। সাক্ষাৎকারে সে কথা উল্লেখ করে তিনি  বলেন, ''মেজর স্বামীর মৃত্যুর পর শুধু বসে কান্নাকাটি করার বদলে আমি মনে করেছিলাম, কী ভাবে তাঁকে গর্বিত করব। ও সব সময় চাইত আমি সুখে থাকি, হাসিখুশি থাকি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সেনায় যোগ দেব।''

কী হয়েছিল প্রসাদ মহদিকের? ৭ নম্বর বিহার রেজিমেন্টের মেজর মহদিক ইন্দো-চিন সীমান্তের তাওয়াংয়ে কর্মরত ছিলেন। সেখানেই ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ছ'টা নাগাদ মহদিকের ব্যারাকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ওই সময় তাওয়াংয়ের তাপমাত্রা ছিল মাইনাস পাঁচ ডিগ্রি। প্রবল ঠান্ডা থেকে বাঁচতে ব্যারাকে আগুন জ্বালানোর জন্য নানা উপকরণ ব্যবহার করা হয়। তা থেকেই আগুন লেগেছিল বলে তখনকার তদন্তে উঠে আসে। ওই সময় মেজর প্রসাদ মহদিকের ব্যারাকে আর কেউ ছিলেন না, কারণ মেজর পদাধিকারীরা সাধারণত একটি ব্যারাকে একাই থাকেন।