রাজ্যের এক নেতার ৩৪৫ কোটির তদন্তে আয়কর দফতর


আইন মেনে হিসেব-বহির্ভূত আয় ঘোষণা করার প্রকল্প চালু করেছিল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। সেই প্রকল্পেই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ৩৪৫ কোটি টাকার হিসেব আয়কর দফতরে জমা দিয়েছিলেন কলকাতার এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁর ওই পরিমাণ অর্থের উৎস কী, সেই বিষয়ে আয়কর দফতর এ বার তদন্ত শুরু করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, অমিতাভ মজুমদার নামে এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির বিপুল অর্থের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অভিযোগ করেছিলেন। 

ওই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বলেন, ''ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির টাকার বিষয়ে আয়কর দফতর তদন্ত শুরু করেছে বলে সম্প্রতি জানতে পেরেছি।'' আয়কর দফতরের খবর, যার টাকা নিয়ে তদন্ত চলছে, তিনি জনপ্রতিনিধি, নেতা। কোনও জনপ্রতিনিধির কাছে এত টাকা থাকার ব্যাপারটা অত্যন্ত সন্দেহজনক। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে দক্ষিণ কলকাতার একাধিক বেসরকারি ব্যাঙ্কে তাঁর ওই টাকা জমা পড়ে। ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি যে-সব সংস্থার নাম করে টাকা জমা দিয়েছিলেন, সেগুলি ভুয়ো কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। ঘটনাচক্রে ওই বছরেই রাজ্যে অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে।

কেন্দ্রীয় সরকারের 'ইনকাম ডিসক্লোজার স্কিম ২০১৬'-য় সেই বছরের ১ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসেব-বহির্ভূত আয় ঘোষণা করলে ৪৫ শতাংশ কেটে নিয়ে বাকি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছিল। ওই প্রকল্পে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা আয় হয়েছিল বলে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর। সেই ঘোষণা অনুযায়ী কলকাতার ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি টাকার হিসেব দিয়েছিলেন এবং ৫৫ শতাংশ ফেরত পেয়েছিলেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ওই টাকা জমা দেওয়ার বিষয়ে সমস্ত নথিপত্রও পেশ করতে বলা হয়েছে অমিতাভবাবুকে। ওই প্রকল্পে শর্ত অনুযায়ী টাকা জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও 'প্যান কার্ড' নম্বর উল্লেখ করা হয়নি। তবে নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কগুলির নথিপত্র পরীক্ষা করলেই ওই ব্যক্তি এবং সংস্থাগুলির সম্পর্কে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।

এ দিকে, তৃণমূলের ২৫ জন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি বৃদ্ধির অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। ওই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী আয়কর ভবন এবং ইডি-র দফতরে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। সুজনবাবু বলেন, ''নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় জানা যাচ্ছে, ২০১১ সাল থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে অনেকেরই সম্পত্তি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। আমরা একটা তালিকা জমা দিয়েছি। বলেছি, এক মাস পরে এসে আবার খোঁজ নেবো। যাঁদের সম্পত্তি বৃদ্ধির হার দেশের মানুষের সম্পত্তি বৃদ্ধির হারের ১০ গুণ বেশি, তাঁদের আয়ের উৎস নিয়ে তদন্ত প্রয়োজন।''