সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ, দেওরের কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় আক্রান্ত বিধবা


ডায়মন্ড হারবার : দেওরের কুপ্রস্তাবে রাজি হওয়া তো দূরের কথা। মৃত স্বামীর ভাগের সম্পত্তি ছেড়ে দিতেই রাজি হননি। তাই তিরিশ বছরের এক বিধবা মহিলার ওপর আক্রমণ চালাল দেওর ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। আর তাদের সেই নির্মম অত্যাচারকে রীতিমত মদত দিয়ে গেল গ্রামেরই কিছু মাতব্বর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থানার গোতলাহাটের ঘটনায় অভিযোগ এমনই। শুধু তাই নয়, ওই মহিলার আট বছরের ছেলেকেও তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। অত্যাচারিত ওই মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা তাঁকে লাথি, ঘুষি, রড, বাঁশ ও জুতো দিয়ে মারতে শুরু করলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। সেই অবস্থায় তাঁর হাত বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে প্রায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় একটি গাছে বেঁধে রেখে মারধর করা হয়। সমস্ত ঘটনা জানিয়ে শুক্রবার ওই মহিলা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

গোতলাহাটের সুলতানগঞ্জের বাসিন্দা বছর তিরিশের সাগরিকা বেওয়া। স্বামী ইজাজুল শেখ মারা গেছেন দু'বছর ছ'মাস আগে। তাঁদের একটি আট বছরের ছেলেও রয়েছে। নাম রাকিবুল। কিন্তু, শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে বোরহানপুর গ্রামে নিজের বাপের বাড়িতে চলে যান তিনি। তারপর থেকে ছেলেকে নিয়ে সেখানেই থাকতেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই মহিলাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোন করে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে পৌঁছে যেতে বলা হয়। বলা হয়, সব সমস্যা মিটমাট করে নেওয়া হবে। সেইমতো সাগরিকা ছেলে রাকিবুলকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যান। এরপরই তাঁকে বলা হয় তাঁর স্বামীর ভাগের সমস্ত সম্পত্তি তাঁর দেওর মুকাদ্দর শেখকে লিখে দিতে। ওই মহিলা রাজি না
হলে মুকাদ্দর তাঁকে কু-প্রস্তাবও দেয় বলে অভিযোগ। তাতেও তিনি সম্মতি না জানানোয় ছেলেকে তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। তারপর চলে অকথ্য অত্যাচার।

অত্যাচারিতা মহিলা জানিয়েছেন, দেওর ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন গ্রামের কিছু মানুষের মদতে তাঁকে লাথি ও ঘুষি মারতে থাকে। রড, বাঁশ ও জুতো দিয়েও মারধর করা হয়। কাটারিও ছোঁড়া হয়। এর জেরে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হাত বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে এসে তাঁকে একটি গাছের সঙ্গে বাঁধা হয়। তখন তিনি প্রায় অর্ধনগ্ন। সেখানেও প্রচণ্ড মারধর করা হয় তাঁকে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই মহিলাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।সমস্ত ঘটনার কথা জানিয়ে অত্যাচারিতা মহিলা শুক্রবার বিষ্ণুপুর থানায় তাঁর দেওর মুকাদ্দর সহ আটজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে ডায়মন্ডহারবার পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারকেও একটি অভিযোগপত্র দেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলার অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এদিকে, অভিযুক্তদের কাছে এনিয়ে জানতে চাওয়া হলে, তারা যথারীতি মুখে কুলুপ এঁটেছে।