সমকামী সম্পর্কে বাধা পরিবার, সঙ্গিনীকে ফিরে পেতে কোর্টে তরুণী


সমকাম অপরাধ নয়। তা সত্ত্বেও মেয়েকে 'অসুস্থ' সাজিয়ে সমকাম সম্পর্কে বাধা দিচ্ছে পরিবার। সঙ্গিনীকে ফিরে পেতে এহেন দাবি নিয়েই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক তরুণী। অবশেষে মেডিক্যাল রিপোর্ট হাতে পেতেই উদঘাটিত হল সত্য। আদালত জানিয়ে দিল, সুস্থ-স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে 'অসুস্থ' তকমা দিয়ে সমকামী সম্পর্ক থেকে দূরে রাখার কোনও এক্তিয়ার পরিবারের নেই।

কলকাতা হাই কোর্টের এহেন হস্তক্ষেপের দৌলতে নিজের পছন্দের সঙ্গিনীকে কাছে পেলেন সুষমা সিংহ (নাম পরিবর্তিত) নামে সেই তরুণী। সমকামী যৌন সম্পর্কের পথে অন্তরায় সেই ৩৭৭ ধারা রদ হওয়ার পর হাই কোর্টের এই রায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে আইনীজীবী মহলের ব্যাখ্যা। সমকামের সম্পর্ক জেনে ফেলায় সঙ্গিনীকে তাঁর বাড়ির লোক জবরদস্তি আটকে রেখেছে। মেয়েকে 'অসুস্থ' সাজিয়ে মেলামেশায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গিনী পারমিতা রায়কে (নাম পরিবর্তিত) ফিরে পেতে এমন দাবি নিয়ে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি রবিকিষান কাপুরের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সুষমা। সওয়ালে সুষমার কৌঁসুলি দাবি করেন, সুষমা ও পারমিতার মধে্য সমকামী যৌন সম্পর্ক রয়েছে, যা এখন কোনও অপরাধ নয়। অথচ তাঁদের মেলামেশায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পারমিতার পরিবার। প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটিকে অসুস্থ সাজিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে। পারমিতার পরিবারের আইনজীবী পাল্টা দাবি করেন, পারমিতা মোটেই সমকামী নন। তাঁর মানসিক সুস্থিতি নেই। অসুস্থ মেয়েটিকে সুষমা জোর করে সমকামী প্রমাণের চেষ্টা করছেন বলে তাঁর অভিযোগ। বিবাদী পক্ষের কৌঁসুলি এও বলেন, "এ কারণে হাসপাতালে একাধিকবার পারমিতার চিকিৎসা হয়েছে। আগে তাঁকে একটি রিহ্যাবে রেখে বহুদিন চিকিৎসা করানো হয়েছিল।" জবাবে সুষমার কৌঁসুলির সওয়াল, ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া গোপন জবানবন্দিতে পারমিতা নিজে স্বীকার করেছেন, তিনি সমকামী। সুষমার সঙ্গে যে তাঁর দীর্ঘদিন সমকামী যৌন সম্পর্ক ছিল, সেকথাও আদালতের নথিতে রয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটিকে পরিবারের তরফে অসুস্থ সাজানোর চেষ্টা চলছে বলে বাদী পক্ষের অভিযোগ।

সওয়াল জবাব শুনে আদালত নির্দেশ দেয়, ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে জন্য মনস্তত্ত্ববিদদের নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হোক। বোর্ডকে পারমিতার শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। দিন কয়েক আগেই আদালতে সেই রিপোর্ট জমা পড়ে। মেডিক্যাল বোর্ড তাতে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, 'পারমিতা শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ।' এই রিপোর্ট দেখার পরই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি রবিকিষাণ কাপুরের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, পারমিতা সম্পূর্ণ সুস্থ। ফলত নিজের পছন্দমতো সমকামী সঙ্গীনি খুঁজে নেওয়ার তাঁর সম্পূর্ণ আধিকার রয়েছে। তাতে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এই রায়ের পরই মামলাটি খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।