হ্যাকার স্বামী, ধরলেন গোয়েন্দা গিন্নি


হঠাৎই আমূল পালটে গিয়েছিল মহিলার আয়কর জমা দেওয়ার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড। পালটে গিয়েছিল অ্যাকাউন্টে দেওয়া মোবাইল নম্বরও। দমে না গিয়ে প্রাথমিকভাবে নিজেই শুরু করেন গোয়েন্দাগিরি। তার ফল দেখে আরও হতবাক তিনি। যে মোবাইল ফোন ও ই-মেল ব্যবহার করা হয়েছে, তা যে তাংর স্বামীরই বন্ধুর। এর পরই মহিলার অভিযোগ, ঘরোয়া গোলমালের জেরে তাঁর স্বামীই অ্যাকাউন্টটি 'হ্যাক' করে পালটে দিয়েছেন পাসওয়ার্ড, মোবাইল নম্বরের মতো তথ্যগুলি। শেষ পর্যন্ত স্বামীর বিরুদ্ধেই আদালতে যান স্ত্রী। আদালতের নির্দেশে স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতেই লালবাজারের সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তাঁর মূল অভিযোগের আঙুল স্বামী ও স্বামীর অজ্ঞাতপরিচয় বন্ধুদের দিকে। যদিও সাইবার থানার আধিকারিকরা প্রাথমিকভাবে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেই তদন্ত শুরু করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, সোদপুর এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলার সঙ্গে বিয়ে হয় দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ওই ব্যক্তির। এর পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সাংসারিক গোলমালও হয়। মহিলার অভিযোগ, ঘরোয়া গোলমাল চলে যায় বাইরে। গত ডিসেম্বর মাসে তিনি আয়করের রিটার্ন ই-ফাইল করতে গিয়ে দেখেন, তিনি ওই ফাইল ব্যবহার করতে পারছেন না। প্রথমে হকচকিয়ে যান তিনি। বেশ কয়েকবারের চেষ্টার পর বুঝতে পারেন, তাঁর আয়কর রিটার্নের জন্য ই-ফাইলের অ্যাকাউন্টের তথ্যই রাতারাতি পালটে গিয়েছে। সম্পূর্ণ পালটে গিয়েছে তাঁর পাসওয়ার্ড। তাঁর অভিযোগ, যেভাবে তথ্যগুলি পালটে দেওয়া হয়েছে, তাকে একমাত্র 'হ্যাকিং'ই বলা যায়। তবে তাঁর ধারণা, এই 'হ্যাকিং' হয়েছে ভিন্ন উপায়ে। কেউ তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। সেই ব্যক্তি অন্য একটি মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেছে। সেই মোবাইল নম্বরের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিকে একটি 'ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড' বা ওটিপি পাঠানো হয়। সেই ওটিপি ব্যবহার করেই রাতারাতি পালটে দেওয়া হয়েছে অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড। নতুন পাসওয়ার্ডের সাহায্যে আয়কর রিটার্নের ফাইলটি এসে যায় 'হ্যাকার'-এর হাতের মুঠোয়।

প্রথমে মহিলা পুলিশ বা আইনের আশ্রয়ে না গিয়ে নিজেই গোয়েন্দাগিরি শুরু করেন। তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে দেখেন, বিশেষ মোবাইল নম্বর ও ই-মেলের সাহায্যে ওই ওটিপি জোগাড় করেছিল 'হ্যাকার'। পুলিশকে মহিলা জানিয়েছেন, ওই মোবাইল নম্বর দেখেই তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন যে, এই মোবাইল নম্বরটি তাঁর স্বামীর বন্ধুর। তাঁর অভিযোগ, স্বামী নিজের পরিচয় লুকানোর জন্য এক বা একাধিক বন্ধুর সাহায্যে তাঁর আয়কর অ্যাকাউন্ট রিটার্ন 'হ্যাক' করেছেন। এর ফলে দিনের পর দিন তাঁকে হেনস্তা হতে হয়েছে। যেহেতু তাঁর তথ্য অন্যদের হাতে চলে গিয়েছে, তাই তিনি অনলাইনে প্রয়োজনমতো আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারেননি। প্রথমে মহিলা কেন্দ্রীয় সরকারকে অনলাইনে অভিযোগ জানান। এর পর তিনি আদালতের মাধ্যমে পুলিশের কাছে যান। মহিলার স্বামী ও বন্ধুরা এই 'হ্যাকিং'-এর পিছনে আছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।