সাগরের বর্জ্য তুলবে জাহাজ, নকশা তৈরি করে তাক লাগাল ১২ বছরের বালক


শিলিগুড়ি:  সমুদ্রের উপর ভাসমান প্লাস্টিক-পলিথিন থেকে শুরু করে মানুষের ফেলে যাওয়া বর্জ্য সংগ্রহ করবে তার নকশায় তৈরি জাহাজ। তার জন্য দরকার পঞ্চাশ কোটি টাকা। সেই অর্থ সংগ্রহে নেমেছে পুণের 'বিস্ময় বালক' হাজিক কাজি। জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ডাকে সোমবার সে হাজির হয়েছিল শহরে। ফেরার পথে শিলিগুড়িতে সেবক রোডের একটি হোটেলে বসে জানালেন তার স্বপ্নের কথা। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা আর শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকেই অর্থ সংগ্রহ করে নিজের স্বপ্ন সফল করতে চান হাজিক। ১২ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণির ছাত্রের তৈরি খসড়া নকশা এখন সারা বিশ্বেই  আলোচনার কেন্দ্রে। তাই পড়াশোনার ফাঁকে জাহাজের পরিকল্পনা আর বিভিন্ন জায়গায় তার ব্লু-প্রিন্ট নিয়ে প্রেজেন্টেশন রাখার ডাক পড়ছে হাজিকের। বাবা পেশায় সাইবার সিকিউরিটি প্রফেশনাল সরফরাজ কাজির সঙ্গে তাই বিশ্বভ্রমণ রুটিনে পরিণত হয়ে গিয়েছে হাজিকের জীবনে।

তিন বছর আগে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় পুনেতে নিজের পাঠশালায় ইন্ডাস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়েছিল ছাত্রদের। সেই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়,  কীভাবে মানুষের ফেলে দেওয়া আবর্জনা সমুদ্রকে দূষিত করছে। তথ্যচিত্রটি হাজিকের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। সেখান থেকেই ন'বছরের হাজিক ভাবতে শুরু করে এর সমাধানের উপায়। ভাবতে ভাবতেই পরিকল্পনা করে ফেলে জাহাজের নকশা। জাহাজটি কীভাবে কাজ করবে? তাও বুঝিয়ে দিয়েছে হাজিক। সে জানিয়েছে,  জাহাজের নিচে থাকবে সাকশন যন্ত্র। হোয়ার্লপুল দিয়ে সমুদ্রের আবর্জনাগুলি টেনে নেওয়া হবে ভ্যাকুম ক্লিনার এর মতো। আলাদা চেম্বারে বড়, মাঝারি, ছোট এবং অতি ক্ষুদ্র আবর্জনা জমা হবে। থাকবে আলাদা অয়েল চেম্বারও। যেখানে সামুদ্রিক বর্জ্যের সংগৃহীত তেল জমা হবে। তবে এই সাকশনের মাধ্যমে যাতে কোনও জীবিত প্রাণী ভিতরে না আসে তার জন্য ফিল্টার ব্যবস্থা থাকছে। পরিশুদ্ধ জল ফিল্টার করে তা আবার সমুদ্রে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

পুণের 'বিস্ময় বালক' হাজিক কাজি জানিয়েছে,  অভিনব এই জাহাজ তৈরি করে প্রথমে ভারতীয় উপকূলকেই বর্জ্য নির্মূল  করতে চায় সে। তারপর প্রয়োজন হলে অন্য জায়গাতেও এই প্রযুক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে। হাজিক বলে, "প্রতি বছর দশ লক্ষ পাখি পৃথিবীতে মারা যায়। তার মধ্যে ৬৬ শতাংশ পাখির মারা যাওয়ার কারণ সেই সব মাছ খাওয়া যেগুলি প্লাস্টিক ও অন্যান্য ফেলে দেওয়া বর্জ্য থেকে খাবার সংগ্রহ করেছিল। তাতেই পরিষ্কার কিভাবে এই বর্জ্য সরাসরি জীবনে প্রভাব ফেলছে।' চলতি মাসেই দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সামনে নিজের আবিস্কার তুলে ধরবে বছর বারোর এই বালক।