সারদা বিতর্কের মাঝেই নরেন্দ্র মোদীর পাল্টা অর্থ লগ্নি বিল


ফেসবুকে ব্রিগেডের কথা তুলে বিরোধীদের আবার 'দুর্নীতিগ্রস্ত' বললেন আজ দুপুর নাগাদ। আর রাতে সারদা-রোজভ্যালির মতো অর্থ লগ্নি সংস্থার প্রতারণা রুখতে বিলের সংশোধন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করিয়ে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফেসবুক-টুইটারে পোস্ট করে দাবি করলেন, এর ফলে আরও জোরদার হল বিলটি।

'অনিয়ন্ত্রিত অর্থ লগ্নি প্রকল্প নিষেধাজ্ঞা বিল' গত বছরই সংসদে পেশের পর অর্থ মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির কাছে গিয়েছিল। কমিটির অনেক সুপারিশই আজ অনুমোদন করল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। তবে তা করার পিছনে রাজনৈতিক কারণ যে প্রধান, তার ইঙ্গিত মিলল সরকারি মঞ্চ থেকে আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে রাজীব কুমার-সিবিআই প্রসঙ্গ উল্লেখ করায়। 

সাংবাদিক বৈঠকে কেউ এ বিষয়ে প্রশ্ন না করলেও মন্ত্রী নিজেই বললেন, ''আমি স্পষ্ট করতে চাই, বাংলায় যে বিতর্ক চলছে... আমাদের আসার আগেই সব হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী জিতে এসেছেন ২০১৪ সালের ১৪ মে, শপথ নেন ২৬ মে। অথচ সুপ্রিম কোর্ট বাংলার পুলিশের কাছ থেকে সিবিআইয়ের হাতে সারদা-মামলার ভার তুলে দিয়েছিল ৯ মে।

২০১৩ সালে রাজীব কুমারের অধীনে এসআইটি হয়েছে। কংগ্রেস ও বামেদের কয়েকজন সুপ্রিম কোর্ট গিয়েছেন। তবে বাকিরা তদন্তের কাজ না এগোলেও মোদী সরকার বিষয়টি ছেড়ে দেবে না।'' 

বিলে যা আছে
• নিষিদ্ধ অনিয়ন্ত্রিত অর্থলগ্নি প্রকল্পে টাকা নেওয়া, তার প্রচার ও বিজ্ঞাপন দেওয়া

• এমন লেনদেনের তথ্য জমা থাকবে কেন্দ্রীয় অনলাইন তথ্যভাণ্ডারে

• লগ্নি ও লগ্নিগ্রাহকের যথাযথ সংজ্ঞা নির্ধারণ বদল কোথায়

• আইনি অস্পষ্টতা কমানো

• আইনের ফাঁক গলে যাতে ধোঁকা দেওয়া সম্ভব না হয়, সে জন্য (ব্যক্তি বা সংস্থার) নামের উল্লেখ

• লগ্নিগ্রাহকদের তথ্য রাখার ভার কোনও বর্তমান বা নতুন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া

এরপর বিল প্রসঙ্গে মন্ত্রীর বক্তব্য, ''বিলে ২১৭ ধারার আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সংশোধন হয়েছে ৫ নম্বর ধারা। এর ফলে অনিয়ন্ত্রিত অর্থ লগ্নি প্রকল্প চালালে, টাকা নিলে, তার প্রসার, প্রচার করলে বা কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করলে সকলের শাস্তি হবে। এফআইআর হবে, জেল হবে, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে গরিবদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।'' প্রসঙ্গত, তৃণমূলের কোনও কোনও নেতানেত্রী ভুয়ো অর্থ লগ্নি সংস্থার 'মুখ' হিসাবে পরিচিত ছিলেন বলেই সিবিআইয়ের দাবি। এই বিল পাশ হলে বর্তমান মামলাতেও কি প্রভাব পড়বে? রবিশঙ্কর বলেন, ''একটা প্রভাব তো থাকেই।''

স্থায়ী কমিটি অবশ্য এ ধরনের ভুয়ো অর্থ লগ্নি সংস্থার তদন্ত শুধুমাত্র সিবিআইকে দিয়ে না করানোর সুপারিশ করেছিল। সেই সংশোধনও অনুমোদন হয়েছে কি না, তার সরাসরি জবাব এড়িয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলা, বিহার, অসম, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের মতো একাধিক রাজ্যে এমন ঘটনা ঘটছে। একের বেশি রাজ্যে এমন বেআইনি কাজ হলে সিবিআই-ই একমাত্র তদন্ত করার উপযুক্ত। এ ক্ষেত্রে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১৬৬টি মামলা দায়ের করেছে সিবিআই। এর বেশিরভাগই বাংলা ও ওড়িশায়।

তবে রাজীব কুমার সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে কেউই সাংবাদিক বৈঠকে রবিশঙ্করকে প্রশ্ন করেননি। সূত্রের দাবি, মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক করতে পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেই প্রসঙ্গ তুলতে বলেন। ঠিক যেভাবে দুর্গাপুরের সভায় নিজের বক্তৃতার অংশ আজ ফের ফেসবুকে তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ''দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার লড়াই অনেককে অস্থির করেছে বলেই কলকাতায় আমার বিরুদ্ধে ওঁরা একজোট হয়েছেন।''