পাঁচ বছরে ১০০০ শতাংশ সম্পদ বৃদ্ধি তৃণমূল নেতাদের! আয়কর দফতরে জমা পড়ল ২৭ নাম


বাঁ দিক থেকে ফিরহাদ হাকিম, আবু নাসের খান চৌধুরি, সাধন পাণ্ডে, শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং শুভ্রাংশু রায়। 


২০১১ থেকে ২০১৬ সাল। মাত্র পাঁচ বছরে কারও সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে তিনশো শতাংশ। কারও ছ'শো, তো কারও সম্পদের পরিমাণ ছাড়িয়ে গিয়েছে এক হাজারের শতাংশেরও বেশি!

এঁরা কেউ শিল্পপতি নন। প্রত্যেকেই জনপ্রতিনিধি। এই ক'বছরে তৃণমূল বিধায়ক-মন্ত্রীদের সম্পত্তি ফুলে ফেঁপে ওঠায় কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। সিপিএম  আরও এক ধাপ এগিয়ে ২৭ জনের একটি নামের তালিকা তুলে দিয়েছে আয়কর ভবনে। তৃণমূলের প্রথম সারির নেতানেত্রীরা রয়েছেন ওই তালিকায়।

অভিযোগ, এই সম্পদ বৃদ্ধির নেপথ্যে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। তৃণমূল সরকারের আমলেই সংস্থাগুলির সঙ্গে নেতানেত্রীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথা উঠে এসেছে।

যেমন, ২০১১ সালে আবু নাসের খান চৌধুরি সম্পত্তির মোট মূল্য ছিল ২৯ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭০৮ টাকা। ২০১৬ সালে সম্পত্তির পরিমাণ ১১৩৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে তিন কোটি ৬৮ লক্ষ ৬৪ হাজার ৯৬৪ টাকা।

জাভেদ খান। বিধানসভা নির্বাচনে কসবা থেকে জিতে রাজ্যের দমকলমন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনি ২০১১ সালে নির্বাচন কমিশনে ২ কোটি ১৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৩৯৭ টাকার সম্পত্তির হিসাব দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে দিয়েছেন ১৭ কোটি টাকার হিসাব। পাঁচ বছরে সম্পত্তি বেড়েছে ৬৯৮ শতাংশ।

একই ভাবে বর্তমানে কলকাতার মেয়র, রাজ্যের নগরন্নোয়মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৮ শতাংশ। প্রাক্তন মেয়র রাজ্যের প্রাক্তনমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়েরও ওই পাঁচ বছরে সম্পত্তি বৃদ্ধি হয়েছে ৪০ শতাংশ।

২০১১ সালে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের সম্পত্তির মূল্য ছিল ৪৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ৪১০ টাকা। ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয় ২ কোটির বেশি। বৃদ্ধি ৪৪১ শতাংশ। বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের পুত্র শুভ্রাংশুর সম্পদের পরিমাণও এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। শুভ্রাংশু এখনও তৃণমূলের বিধায়ক। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছে ৬৭৫ শতাংশ।

কোন যাদুতে এই শতাংশ সম্পত্তি বৃদ্ধি পেল তৃণমূল নেতাদের? এই প্রশ্ন তুলে বৃহস্পতিবার আয়কর দফতরে নথি জমা দিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়,''এরা জনপ্রতিনিধি। অন্য কোনও আয় নেই। তা হলে একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে কী ভাবে সম্পত্তির এমন বৃদ্ধি হল। আয়ের উৎস কী?  নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে জ্বলজ্বল করছে এই তথ্য। সরকারি নথিতে যদি এমন তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে চিটফান্ড থেকে কত কামিয়েছেন নেতানেত্রীরা?''

যদিও এ সব ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তৃণমূল নেতারা। জাভেদ খান বলেন, "৩৪ বছর সিপিএম নেতাদের সম্পত্তির পরিমাণ কত বেড়েছে? ওরা যা কিছু বলতে পারে। যেখানে উত্তর দেওয়ার দেব।" এ বিষয়ে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের কাছে জানতে চাইলে তিনি কার্যত প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। তাঁর কথায়: "এ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। আমাদের নাম রয়েছে। বিচারাধীন বিষয়। কোনও মন্তব্য করতে চাই না।" ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল অন্য নেতাদের সঙ্গেও। কিন্তু তাঁরা কেউ উত্তর দেননি। এ দিনই আয়কর দফতরের পাশাপাশি সুজন চক্রবর্তী সল্টলেকের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটে গিয়ে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি তদন্তের বিষয়ে স্মারকলিপি জমা দেন। এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানান।