বাবাকে মর্গে রেখেই মাধ্যমিক দিল ছেলে

শান্তনু মাইতি।

রাতে বিছানায় যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন বাবা। তাঁকে দ্রুত এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে জানা যায়, কীটনাশক পান করেছেন তিনি। শেষ রক্ষা হয়নি। হাসপাতালেই বাবাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়েছিল ছেলে। এদিকে, রাত পোহালেই তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা— মাধ্যমিক। তার আগে এমন 'অঘটনে' ভেঙে পড়েছিল বছর পনেরোর শান্তনু মাইতি। তবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন শিক্ষকেরা। পরীক্ষায় বসার সাহস জুগিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতে বাবাকে মর্গে রেখেই মঙ্গলবার মাধ্যমিক দিল শান্তনু।

স্থানীয় সূত্রের খবর, পটাশপুর-২ ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা খোকন মাইতি (৪৫) কঠিন অসুখে ভুগছিলেন। স্ত্রী এবং দুই ছেলে নিয়ে তাঁর সংসার। বাবার অসুস্থতার কারণে রোজগারের জন্য বড় ছেলে মঙ্গল মাইতি পুণেতে গিয়ে কাজ করে। ছোট ছেলে শান্তনু মাইতি এবারে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সে শ্রীরামপুর হরপ্রসাদ হাইস্কুলে পড়ে। টেস্ট পরীক্ষার পরে পাশের গ্রামে ধুসুরদ্দায় মামা বাড়িতে চলে গিয়েছিল সে। সরস্বতী পুজোয় বাড়ি ফিরেছে খোকনের বড় ছেলে মঙ্গল।

পরিবার সূত্রের খবর, সোমবার  কীটনাশক পান করে শুয়ে পড়েন খোকন। রাতে যন্ত্রণায় ছটফট করলে তাঁকে এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই খোকনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে হাসপাতালে যায় শান্তনু। কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। ছাত্রের ওই বিপদে পাশে এসে দাঁড়ান স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক। শিক্ষকের সহযোগিতায় মঙ্গলবার পটাশপুর হাড়োচরণ বিদ্যাপীঠ বাংলা পরীক্ষায় দেয় শান্তনু। পরীক্ষার শেষে এ দিন রাতে সে বাবার দেহ সৎকারে কাজ করে। তার আগে গোটা দিন দেহ রাখা ছিল মর্গে।

শান্তনুর দাদা মঙ্গল বলে, ''বাবা হঠাৎ করে এমন কাণ্ড ঘটাবে বুঝতে পারিনি। বাবার মৃত্যুর পরেও ভাইয়ের অদম্য জেদে তাকে পরীক্ষার বসতে সাহায্য করেছে। রাতে বাবার দেহ সৎকার করা হয়েছে।'' শান্তনুর কথায়,  ''পরীক্ষার দেওয়ার কথাই মাথায় ছিল না। শিক্ষকেরা পাশে থেকে আমায় সাহস দিয়েছেন।''

ছাত্রের লড়াইয়ের প্রশংসায় স্কুলের শিক্ষকেরাও। শ্রীরামপুর হরপ্রসাদ হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্রীকান্ত সিংহ বলেন, ''শান্তনু পড়াশুনায় ভাল। বাবার মৃত্যুর পরে স্কুলের শিক্ষকেরা ওকে মনোবল জুগিয়েছেন। ও নিজের জেদেই পরীক্ষা দিয়েছে।''