বিজেপিতে যোগ দিলেন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার মুহূর্তে ভারতী ঘোষ।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশাসনিক সভায় জঙ্গলমহলের 'মা' বলে সম্বোধন করেছিলেন। প্রায় ছ'বছর ধরে তিনি ছিলেন তৃণমূলের অতি আস্থাভাজন। রাজ্যের সেই প্রাক্তন পুলিশ কর্তা তথা আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ এ বার যোগ দিলেন বিজেপিতে। সোমবার নয়াদিল্লিতে বিজেপি-র সদর দফতরে দলের সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় তাঁর হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন।

ভারতীদেবী যখন চাকরি থেকে ইস্তফা দেন এবং সিআইডি তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে, সেই সময় থেকেই তাঁর রাজনীতিতে আসা নিয়ে চর্চা শুরু হয়। শেষপর্যন্ত এ দিন বিকেলে নয়াদিল্লিতে বিজেপি-র সদর দফতরে মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার উপস্থিতিতে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। শীর্ষ নেতৃত্বকে পাশে বসিয়ে ভারতীদেবী এ দিন তোপ দাগেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। কলকাতার ধর্মতলায় এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী 'সত্যাগ্রহ' করছেন। ভারতীদেবী কটাক্ষ করেন বলেন, ''মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ধর্না সত্যাগ্রহ নয়। অসত্যাগ্রহ।" তাঁর প্রশ্ন, চিটফান্ডের কারণে রাজ্যের মানুষ যখন সর্বস্বান্ত তখন কেন সত্যাগ্রহ করেননি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ''তখন সত্যাগ্রহ করে মানুষের পাশে দাঁড়ালে তাঁরা উপকৃত হতেন।''

চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে এর আগে তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ গ্রেফতার হয়েছেন। সে প্রসঙ্গ তুলে এ দিন ভারতীদেবী বলেন, ''মদন মিত্র, তাপস পালেরা গ্রেফতার হওয়ার পরে কেন মুখ্যমন্ত্রী সত্যাগ্রহ করেননি? আজ কেন সত্যাগ্রহে বসতে হল!'' কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধেও এ দিন তোপ দাগেন ভারতীদেবী। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী রাজীবকে 'বিশ্বের অন্যতম সেরা পুলিশ কমিশনার' বলে উল্লেখ করেছিলেন। ভারতী কটাক্ষ করে বলেন, ''যদি সেরা পুলিশ কমিশনারই হবেন উনি, তবে চিটফান্ড কাণ্ডে কাউকে ধরতে পারেননি কেন?'' তাঁ আরও সংযোজন, ''সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্ত চলছে। তদন্তে সবারই সহযোগিতা করা উচিত।''

কাগজেকলমে ভারতীদেবী এখনও 'ফেরার'। রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিটও গঠন করেছে। যদিও এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ভারতীদেবী। শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, তাঁকে এখনই গ্রেফতার করা যাবে না। আদালতের সেই 'ঢাল'ই ব্যবহার করছেন ভারতীদেবী। সে কারণে সম্প্রতি তাঁর দেহরক্ষীকে গ্রেফতার করার সময়ে সিআইডি তাঁকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

২০১৭-র ২৫ ডিসেম্বর রাতে রাজ্যের পাঁচ আইপিএস অফিসারের বদলির নির্দেশ জারি হয়। ভারতীদেবী তখন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার। ওই নির্দেশে বলা হয়, ভারতীকে ব্যারাকপুরে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের তৃতীয় ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসারের পদে পাঠানো হল। তার আগের কয়েক মাস ধরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতীর সম্পর্ক অবনতির দিকে যাচ্ছিল। কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা চেয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদন মঞ্জুরও হয়। এর পর পশ্চিম মেদিনীপুরে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু হয়। সিআইডিও তদন্ত শুরু করে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে তাঁ বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ঘাটাল আদালত। তাঁর পর থেকেই ভারতীদেবী 'বেপাত্তা' হয়ে যান। মাঝে মাঝে অডিয়ো বার্তার মাধ্যমে নিজের বক্তব্য জানাতেন।

২০১২ সাল থেকে বদলির নির্দেশের আগে পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন ভারতী। গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের সময়ে নির্বাচন কমিশন তাঁকে সিআইডি-র স্পেশ্যাল সুপারের পদে বদলি করেছিল। কিন্তু ভারতীদেবী তৃণমূলের এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে, নির্বাচন মিটতেই আগের পদে ফিরে আসেন। বিরোধীরা কটাক্ষ করতেন, তৃণমূলের প্রার্থী হবেন ভারতী। এ দিন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহল থেকে তিনি বিজেপি-র প্রার্থী হবেন কি? ভারতীদেবী বলেন, ''আমি প্রার্থী হওয়ার জন্য বিজেপিতে যোগ দিইনি। ওটা অমিত শাহ এবং মোদীজি ঠিক করবেন।''