প্রয়াত গায়ক প্রতীক চৌধুরি, শোকস্তব্ধ সংগীতজগত


দূরে, বহুদূরে চলে গেলেন একতারা বাজিয়ে গাওয়া বাউল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলা সংগীতজগত থেকে খসে পড়ল আরেক নক্ষত্র। প্রয়াত প্রতীক চৌধুরি। এদিন সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথেই তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, সুরাহা হয়নি। চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর মুহূর্তের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শোকের ছায়া নেমে আসে সংগীত মহলে।


নয়ের দশকে যে ক'জন গায়কের হাত ধরে বাংলা সঙ্গীত জগতে নতুন জোয়ার এসেছিল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রতীক চৌধুরি। ছোটবেলা থেকে একাধিক গুরুর কাছে সঙ্গীতচর্চা তাঁকে গানের জগতে পাড়ি দেওয়ার উৎসাহ দিয়েছিল। ১৯৯৪ সালে তিনি প্রথম বিজ্ঞাপনী গান অর্থাৎ জিঙ্গলস দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেন। বহু বিখ্যাত ব্র্যান্ডের হয়ে জিঙ্গলস গেয়েছেন তিনি। কুকমি, খাদিম, টাটা স্টিল, স্টিলাক্সের বিজ্ঞাপনে তাঁর কণ্ঠস্বর বিখ্যাত হয়ে ওঠে। এরপর প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে একের পর এক কালজয়ী গান রেখে গিয়েছেন প্রতীক চৌধুরি। গত বছরের ডিসেম্বরে নিজের জন্মদিনেই অনুরাগীদের উপহার দিয়েছিলেন একটি অ্যালবাম – 'এই বাংলার নীড়ে।'


তিনি গায়ক। কিন্তু শুধুই গায়ক বললে তাঁকে কম সম্মান দেওয়া হবে। বরং বলা ভাল, দুই বাংলাকে সুরের সুতোয় গাঁথতে পারেন এমন এক শিল্পীর নাম প্রতীক চৌধুরি। প্রায় দু'বছর পর গত ডিসেম্বরে গান রেকর্ড করেন তিনি। তাও সোলো গান। জন্মদিনে অনুরাগীদের জন্য তাঁর উপহার ছিল 'এই বাংলার নীড়ে'। সংগীতের জগতে প্রতীক চৌধুরি পরিচিত নাম। তাঁর 'মন বাঁওরা' জনগণের মন ছুঁয়েছিল। এছাড়া তাঁর গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত আজও অমলিন। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে দু'বছর তিনি রেকর্ডিং করেননি। বাঙালিবাবু (২০০২), পাতালঘর (২০০৩)-এর মতো ছবিতে প্লে-ব্যাক গেয়েছিলেন প্রতীক। অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নির্মীয়মাণ ছবি 'হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী'-তে বেশ কিছু গান গেয়েছিলেন প্রতীক। এটিই তাঁর শেষ কাজ। গোটা সংস্কৃতিজগতকে শোকস্তব্ধ করে বিদায় নিলেন 'মন বাঁওরা'র স্রষ্টা।