কাশ্মীরিদের সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রশাসনকে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের


কাশ্মীরিদের নিগ্রহের ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপ করেছে গত কালই। রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির কাছে। সুপ্রিম কোর্ট আজ দেশের সর্বত্র কাশ্মীরিদের সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে বলল কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১০ রাজ্যের প্রশাসনকে। এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যগুলির মুখ্যসচিব এবং ডিজিপিকে (দিল্লির ক্ষেত্রে পুলিশ কমিশনারকে)। অন্তর্বর্তী রায়ে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, কাশ্মীরিরা কোথাও হুমকি, হেনস্থা বা সামাজিক বয়কটের মুখে পড়লে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে প্রত্যেক কাশ্মীরির নিরাপত্তা। এই অন্তর্বর্তী রায়ের বিষয়ে বিশদে জানতে শীর্ষ আদালতে রাজ্যের আইনজীবী প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের রূপরেখা শীঘ্রই স্থির করা হবে বলে নবান্ন সূত্রের দাবি।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আজ জানিয়েছেন, কাশ্মীরিদের উপরে কোনও অত্যাচার সরকার বরদাস্ত  করবে না। রাজ্যগুলির মুখ্যসচিবদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। পাঠানো হয়েছে 'অ্যাডভাইজরি'। মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠিও লিখেছেন। বিরোধীদের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী নিজে কেন এ নিয়ে মুখ খুলছেন না। কেন নিন্দা করছেন না এ সবের? কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা আঙুল তুলছে বিজেপি-সঙ্ঘের দিকে। বক্তব্য, এরাই কাশ্মীরিদের প্রতি বিদ্বেষ ও হিংসা ছড়াচ্ছে। কলেজে গিয়ে হুমকি দেওয়া, কাশ্মীরি ছাত্রদের ভর্তি না-নেওয়ার মুচলেকা লেখানোর ঘটনায় এদেরই সংগঠন জড়িত ছিল। যদিও কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর দু'দিন আগেও দাবি করেছেন, কাশ্মীরি পড়ুয়াদের কোথাও নিশানা করা হচ্ছে না। তাঁদের কোনও বিপদ নেই। আজও বিজেপি নেতারা একই কথা বলে গিয়েছেন। 

ইউজিসি এ দিকে কাশ্মীরি ছাত্রদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চিঠি পাঠিয়েছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। কাশ্মীরি ছাত্রদের আতঙ্ক দূর করতে শিক্ষকদের 'কাউন্সেলিং' শুরু করতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বলছে, কাশ্মীর থেকে এঁরা তো প্রধানমন্ত্রীর নামে বা অন্য সরকারি বৃত্তি নিয়েই পড়তে গিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। অথচ শাসক শিবিরের লোকজনই তাদের তাড়াতে চাইছে! 

কাশ্মীরিদের সুরক্ষা চেয়ে মামলাটি করেছেন আইনজীবী তারিক আবিদ। আবেদনে মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়ের মন্তব্যের বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেছেন, ''দাঙ্গা, গণপিটুনি রুখতে যে পুলিশ আধিকারিকদের নোডাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল, কাশ্মীরিদের উপর আক্রমণ ঠেকানোর দায়িত্বও তাঁদের। শুধু মারধর নয় তাঁদের কোনও রকম নিগ্রহের শিকার হতে হচ্ছে কি না বা সামাজিক ভাবে বয়কট করা হচ্ছে কি না তা-ও দেখতে হবে।'' আদালতের এই নির্দেশ জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, মেঘালয়, মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ও পশ্চিমবঙ্গের প্রতি। রায়কে স্বাগত জানিয়ে ওমর আবদুল্লা টুইট করেছেন, ''সুপ্রিম কোর্টের প্রতি কৃতজ্ঞ। দিল্লির নির্বাচিত নেতৃত্বের যা করার কথা, শীর্ষ আদালত তা করল।'' মেহবুবা মুফতি লিখেছেন, ''এটা লজ্জার, অন্যেরা চোখ বুজে ছিলেন। বিচার ব্যবস্থাকেই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করতে হল।''