সাত দিনের মধ্যে লাহোরে ঢুকে পাক ধংসের হুঁশিয়ারি ভারতীয় সেনার


দেশের জনতা রাগে ফুঁসছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলছেন সেনাকে ছাড়পত্র দিয়ে বলছেন ভারতীয় সেনা তাঁরা যা খুশি করতে পারে। অনেকে পথে নেমে মিছিল করছেন। মোমবাতি থেকে মোবাইলের টর্চ লাইট জ্বালিয়ে বইছে শ্রদ্ধার বন্যা। কিন্তু যাদের সতীর্থদের প্রাণ গেল, যারা দিনের পর দিন জীবনের বাজি রেখে সীমান্তে লড়ছেন তাঁরা কি বলছেন? তাঁরা কি করতে চাইছেন? পুলওয়ামা হামলার দায় কাদের উপর দিচ্ছেন তাঁরা? সে খবর কেউ জানতে চায় না। তাই সোশ্যাল মাধ্যমেই নিজেদের মনের কথা জানিয়েছেন সেনা জওয়ানরা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় সেনার খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারের চক্ষুশূল হয়েছিলেন এক জওয়ান। কিন্তু তাতে কিছু পরিবর্তন হয়নি। তাঁরা যে ভারতমাতার সৈনিক। পালটা দিতে তাঁরা পিছপা হন না। নেহাত তাঁদের হাত পা ধরে টেনে রেখেছে দেশের রাজনীতি , না হলে সব হামলার কড়া জবাব দিতে প্রস্তুত ভারতীয় সেনা। ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে এমনটাই আবারও তাঁরা জানাচ্ছেন আবারও সেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই।

নাম না নিয়ে এক খুব্ধ সেনা জম্মু কাশ্মীরের সীমান্ত থেকেই ফেসবুক লাইভ করে জানিয়েছেন, "কেন আমাদের এভাবে আটকে রাখা হচ্ছে বলতে পারেন? সাতদিন সময় দিন। লাহোরে ঢুকে সব পাকিস্তানি সেনাদের মেরে আসব। ওদের জঙ্গিরা আমদের ৪০ জনকে মেরেছে। আমরা এখনই ওদের ঘরে ঢুকে ৪০০ জনকে মেরে আসতে পারি। আমাদের আটকাবেন না প্লিজ। আর কতদিন সহ্য করতে হবে?" কথাগুলো বলতে বলতেই গলা ভারি হয়ে আসে জওয়ানের।
 
মনোজ ঠাকুর নামে খুব্ধ জওয়ান আগেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি নিয়ে। আবারও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে জানিয়েছেন, "আজ পুলওয়ামাতে আমার ৪০ জন সঙ্গিকে হারিয়েছি। এটা অত্যন্ত চিন্তার বিষয় যে এটা দিনের পর দিন হয়েই চলেছে। আমাদের আটকে রাখা হয়েছে। হাত পা বাঁধা। কিন্তু সমস্ত রকম বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত। দিল্লিতে বসে সরকার এটা নিয়েও রাজনীতি করছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিচ্ছু হতে পারে না। আমাদের উপর দায়িত্ব ছাড়ুন। এটা উরির চেয়েও বড় ঘটনা ঘটে গেল। আর কত দিন আমাদের এসব সহ্য করাবেন?"

এজেন্ট এক্স নাম দিয়ে উর্দি পরিহিত এক জওয়ান ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে জানিয়েছেন, "আমি এই সেনার উর্দি আজ ছেড়ে দিলাম। আমার রেজিগনেশনও গ্রহণ করা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেন আমি এই উর্দি ছাড়ছি জানেন কি? কারণ এই উর্দির দাম যারা জানে না তাঁরা সেই উর্দির পরিহিতদের উপর খবরদারি চালায়। দিল্লির গদিতে বসে এটাই তাঁদের কাজ। এটা আমি আর মানতে পারছি না।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "আমরা আমাদের নিজ দক্ষতায় সেনা হিসাবে যোগদান করেছি। দিল্লির নেতাদের ভোটে নয়। তাহলে কেন আমরা তাঁদের কথা মেনে চলব? কেনই বা তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন যে আমরা কোন পরিস্থিতিতে কখন আমরা গুলি চালাব?।"

তাঁর দাবি, "ভারতের সিস্টেমটাই খারাপ। আর সেটা গত ৭০ বছর ধরেই খারাপ।" ৩৭০ আইনের দিকেও প্রশ্ন তুলেছেন ওই জওয়ান। প্রতিবাদী কণ্ঠে তিনি জানিয়েছেন, "আমরা নাকি ধর্ষণ করি? আমরা মানবিধিকার লঙ্ঘন করি। আর জঙ্গিরা যখন সবকিছু লঙ্ঘন করে হত্যালীলা চালায় তখন কোথায় যায় ওই সব বুদ্ধিজীবিরা? হ্যাঁ আমরা দেশের জন্য মরতেই জন্মেছি। কিন্তু তা বলে যারা পাথর ছোঁড়ে সেনাদের উপর, গালিগালাজ করে, গায়ে হাত তোলে, ভারতের জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে দেয় আমাদের চোখের সামনে সেটা দেখতে আমরা এই উর্দি পরিনি। কিন্তু এসব দিনের পর দিন দেকজতে হয় সহ্য করতে হয় তাই আজ আমি এই উর্দি ছাড়তে বাধ্য হলাম।"

প্রসঙ্গত পুলয়ামায় জঙ্গি হামলার ঘটনার পরেই প্রধানমন্ত্রী সেনাদের উদ্দেশ্যে বলেন , "কোথায় কখন এবং কিভাবে এই ঘটনার দোষীদের সাজা দিতে হবে সেটা আমার সেনারা ঠিক করে নেবে। আমি ওদের নিজের ইচ্ছা মতো কাজ করাইয়ু সহমত দিচ্ছি।" কিন্তু বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে এখানেই ওই ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী মোদীর আরও একটা কোনও রাজনৈতিক চাল নয় তো?

কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই কথা শুধুই দেশের জনতাকে আরও একটা আই ওয়াশ ছাড়া কিচ্ছু নয়। মারব বললেই মারা যায় না। অনেক বুঝে শুনে পা ফেলতে হয়। হঠাৎ করে কিছু করতে গেলেও পূর্ব পরিকল্পনার প্রয়োজন। মোদীর কথা অনুযায়ী ওইরকম কোনও আঘাত করতে গেলে উলাটপুরান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।