খাবার চাইলেই বেদম মার, দুই হোমের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের মারাত্মক অভিযোগ!


কথা ছিল একটা নতুন জীবনের সন্ধান পাবে ওরা। ছোট্ট বয়সেই অভাব আর নেশার কালো অন্ধকার থেকে মুক্তির পথ খুঁজে দেওয়া হবে ওদের। কিন্তু বাস্তবে তারকেশ্বরের কিছু অভাবী শিশুর সঙ্গে যা ঘটল তা এককথায় অমানবিক, বীভৎস এবং অবশ্যই কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কাঠগড়ায় হাওড়ার দুটি হোম - মালি পুকুর ও ইটিন্ডা।

ঘটনাসূত্রে জানা গিয়েছে, মাসকয়েক আগে তারকেশ্বর স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে বেশ কিছু বাচ্চা ছেলেমেয়েকে উদ্ধার করে তারকেশ্বর থানার পুলিশ। অভাবের তাড়নায় শিশুগুলি স্কুলের মুখ তো দেখেইনি, বরং নানা ধরণের নেশায় জড়িয়ে পড়েছিল তারা। তারকেশ্বর থানার তৎকালীন ওসি অমিত মিত্র শিশুগুলিকে একমাস খাওয়ানোর দায়ত্বিও নেন। হাতে তুলে দেন উপহার। এরপরই চাইল্ড লাইন ও মহাজীবন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে শিশুগুলির জায়গা হয় হাওড়ার ওই দুটি হোমে।

অভিযোগ, শুরু থেকেই ছোট্ট ওই ছেলেগুলিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতে থাকে। খেতে দেওয়া হত না ঠিক, অস্বাস্থ্যকর, পূতিগন্ধময় পরিবেশে ফেলে রাখা হত তাদের। অভূক্ত শিশুগুলি খাবার চাইলেই জুটত বেদম মার। দিনের পর দিন এই পরিবেশে থাকতে-থাকতে অসুস্থ হয়ে পড়ে অনেকে। ইতিমধ্যে আরও একটি ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

মাসখানেক আগে উলুবেড়িয়ার ইটিন্ডা হোমে একটি শিশুর রহস্যমৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। এমনকী মৃত্যুর পর শিশুটির পরিবারকেও প্রাথমিক অবস্থায় কিছু জানায়নি হোম কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালেও ইটিন্ডা হোমের চরম অব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন উলুবেড়িয়ার তৎকালীন মহকুমাশাসক অংশুল গুপ্ত। একই ধরণের অভিযোগ উঠেছে মালি পুকুর হোমের বিরুদ্ধেও।

মারাত্মক শিশু নির্যাতনের অভিযোগ দুই হোমের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে মালি পুকুর হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, 'বাচ্চারা এরকম অভিযোগ করেই থাকে। এর মধ্যে কোনও সত্যতা নেই।' প্রতিক্রিয়া দিতে অস্বীকার করেন ইটিন্ডা হোম কর্তৃপক্ষ।

সরকারি অর্থ সাহায্যে চলা দুটি হোম কীভাবে এমন অমানবিক আচরণ করতে পারে শিশুদের বিরুদ্ধে, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। তারকেশ্বরের বাচ্চাগুলিকে কার্যত একমাস দেখভাল করেছিলেন যিনি, তারকেশ্বর থানার তৎকালীন ওসি অমিত মিত্র বলেন, 'খুব দুঃখজনক ঘটনা। আমাদের সাধ্যের মধ্যে যতটুকু করা যায়, করেছিলাম। কিন্তু এই পরিনতি কখনোই কাম্য নয়।' কার্যত নিরুপায় চাইল্ড লাইনও।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়টি হল, এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি হোম দুটির বিরুদ্ধে। আপাতত শিশুগুলি ফিরে গেছে তারকেশ্বরেই। কিন্তু ছোট্ট বয়সেই জীবনের অন্ধকার দিকটা দেখে ফেলেছে যারা, এই অমানবিক নির্যাতন তাদের আরও বিপথগামী করে দেবে না তো, শঙ্কায় অনেকেই।