৮০০ চিনা সেনাকে সুস্থ করেছিলেন এই ভারতীয়, ফেরা হয়নি দেশে


তিনি ভারতীয়। চিনের পরম বন্ধু। সান ইয়াত সেন থেকে শুরু করে মাও সে তুং তাঁর চরণে মাথা ঠেকিয়েছেন। আজ ভারত – পাক সম্পর্কের তিক্ততার মাঝে অনেকেই চিনা কূটনীতির ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেন। কিন্তু একসময় চিনের ঘোর দুর্দিনে এই ভারতীয় ছিলেন চিনা সেনাদের রক্ষাকর্তা। একডাকে এখনও তাঁকে চেনে চিনারা। তিনি দ্বারকানাথ কোটনিশ।

চিনা সেনাদের সুস্থ করে আর দেশে ফেরা হয়নি মহারাষ্ট্রের ডাঃ দ্বারকানাথ শান্তারাম কোটনিশের। নিজের প্রাণটাই চলে গিয়েছিল পরবাসে। চিনের শিনঝুয়াং-এর 'শহিদ স্মরণী পার্কে'র মিউজিয়ামের সামনে রয়েছে তাঁর মূর্তি। কিন্তু চিকিৎসকের মূর্তি শহিদের মাঝে কেন?

১৯৩৮ সালে জাপান আক্রমণ করে চিনে। যুদ্ধে আহত চিনা সৈন্যদের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের খুব অভাব ছিল। চিনা জেনারেল ঝু দে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী জওহরলাল নেহরুকে সাহায্যের জন্য চিঠি লিখে পাঠান। নেহরু তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে অনুরোধ করছিলেন যদি কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক ডাক্তার চিনে পাঠানো সম্ভব হয়। নেতাজির আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন পাঁচজন ভারতীয় ডাক্তার। এলাহাবাদের ডাঃ অটল, নাগপুরের ডা. চোলকার আর কলকাতার দেবাশিস মুখোপাধ্যায় ও বিজয় বসু এবং মহারাষ্ট্রের ডাঃ কোটনিশ।
 
১৯৩৯ সালের মার্চ মাসে চিনে পৌঁছলেন কোটনিশসহ পাঁচ ভারতীয় চিকিৎসক। তাঁদের সে দেশে স্বাগত জানিয়েছিলেন মাও সে তুং সহ তাবড় কমিউনিস্ট নেতারা। স্বপন সেনের লেখা থেকে জানা যায়, 'ভ্রাম্যমান চিকিৎসা কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভারতীয় ডাক্তাররা যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসা করেছিলেন। ডাক্তার কোটনিশ মাও সে তুঙের নেতৃত্বাধীন অষ্টম রুট আর্মির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

ওষুধের যোগান প্রায় ছিলই না। ছিল না ঠিকমতো কোনওরকম চিকিৎসার সরঞ্জাম। এর মাঝেও টানা বাহাত্তর ঘন্টা বিভিন্ন অপারেশন করে তিনি হয়ে উঠলেন চিনা বাহিনীর নয়নের মণি।' স্বপন সেন এও লিখেছেন, 'যুদ্ধ চলাকালীন তিনি একাই প্রায় ৮০০ জন চিনা সৈন্যের অপারেশন করেছিলেন বলে জানা যায়'।

১৯৪০ সালে কানাডার ডাক্তার নরম্যান বেথুনের নামে তৈরি হাসপাতালে ডিরেক্টর পদে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানেই তার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল গুয়ো কুইংলান নামে এক চিনা নার্সের । প্রায় এক বছরের প্রেম। ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে কুইংলানকে বিয়ে করেছিলেন কোটনিশ। পরের আগষ্টে সন্তান হয় তাঁদের। কোটনিশ নাম রেখেছিলেন ইনহুয়া। চিনা ভাষায় যার অর্থ ভারত-চিন।

যুদ্ধের সময় অমানসিক পরিশ্রম করার মাশুল এবার তাঁকে দিতে হয়। আক্রান্ত হন স্নায়ুর রোগে। মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে জীবনাবসান হয় চিকিৎসকদের। আর দেশে ফেরা হয়নি। থেকে গিয়েছেন চিনের শহিদ স্মরনী পার্কে এক মূর্তি হয়ে। স্বয়ং মাও সে তুং ডাঃ দ্বারকানাথ কোটনিশের সমাধিতে লিখে গিয়েছেন, "The army has lost a helping hand, the nation has lost a friend. Let us always bear in mind his internationalist spirit."।

আধুনিক চিনের রূপকার সান ইয়াৎ সেনের পত্নী তাঁর স্মরণে বলেছিলেন, "His memory belongs not only to your people and ours, but to the noble roll-call of fighters for the freedom and progress of all mankind. The future will honor him even more than the present, because it was for the future that he struggled."

তথ্যসূত্র: Swapan Sen এবং 'The Story of the Congress Medical Mission to China'