পাকিস্তানকে নির্বাসিত করা সহজ নয়, মত সৌরভের


পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মঞ্চে একঘরে করে তোলার প্রয়াস কি সত্যিই নিতে পারে ভারত? সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বোর্ড প্রশাসকদের প্রধান বিনোদ রাই এমন ইচ্ছার কথা বললেও নানা প্রশ্ন উঠছে এ নিয়ে। স্বয়ং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি কয়েক দিন আগে নিজেই বলেছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করুক ভারত, তিনিও নিশ্চিত নন। 
সৌরভ সোমবার একটি চ্যানেলে বলেছেন, ''দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ভারত খেলে না পাকিস্তানের সঙ্গে। শেষ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয়েছে ২০০৬ সালে। কিন্তু পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত করার প্রয়াস কতটা সফল হবে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। এটা খুব বড় একটা ব্যাপার।'' শুটিং বিশ্বকাপে পাকিস্তানের দুই খেলোয়াড়কে ভিসা না দিয়ে উল্টে ভারতই যে বিপাকে পড়েছে, সেই কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন সৌরভ। পাকিস্তানের দুই খেলোয়াড়কে ভিসা না দেওয়ায় ভবিষ্যতে অলিম্পিক্স কমিটির আওতায় থাকা যে কোনও খেলা আয়োজনের ক্ষেত্রেই সমস্যায় পড়ে গিয়েছে ভারত। কোনও অলিম্পিক খেলার বিশ্বমানের ইভেন্টই আর আয়োজন করার দায়িত্ব ভারত পাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সৌরভ বলছেন, ''কোনও দেশ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলা বন্ধ করতে পারে। সেটা তাদের হাতে রয়েছে। কিন্তু অন্য কোনও দেশকে নির্বাসিত বা একঘরে করাটা সেই খেলার নিয়ামক সংস্থার উপরই নির্ভর করবে।''   

পুলওয়ামা জঙ্গি হানার জেরে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা নিয়ে তর্ক শুরু হয়েছে। সৌরভ, হরভজনের মতো প্রাক্তনরা বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সব রকমের সম্পর্ক ত্যাগ করা উচিত। আবার সুনীল গাওস্কর এবং সচিন তেন্ডুলকরের মতো কিংবদন্তিরা প্রকাশ্যেই বলেছেন, পাকিস্তানকে দুই পয়েন্ট উপহার দেওয়ার কোনও মানে হয় না। সচিনদের মতে, বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলে পাকিস্তানকে হারানোর চেষ্টা করা উচিত ভারতের। এ রকম আবহের মধ্যেই দুবাইয়ে বুধবার আইসিসি-র বৈঠক রয়েছে। সেখানে ভারতীয় বোর্ডের পাঠানো চিঠি নিয়ে কথাবার্তা হবে কি না, সেটাই দেখার। পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার তীব্র নিন্দা করে ভারতীয় বোর্ড আইসিসি-কে এই চিঠিতে লিখেছে, যে দেশ সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করা উচিত নিয়ামক সংস্থার। চিঠিতে পাকিস্তানের নাম করা হয়নি। শুধু এখানেই থেমে না থেকে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত সিওএ (কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স) প্রধান বিনোদ রাই মন্তব্য করেছেন যে, ''বর্ণবিদ্বেষের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যেমন নির্বাসিত করা হয়েছিল সব ধরনের খেলাধুলো থেকে, পাকিস্তানকেও তেমনই একঘরে করে দেওয়া উচিত।'' তবে রাই এমন দাবি জানালেও আইসিসি এই মর্মে আলোচনা করবে বলে খবর নেই।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে বিশ্বকাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে পারে নিয়ামক সংস্থা। কিন্তু তাদের দাবি মেনে পাকিস্তানকে একঘরে করার চেষ্টা শুরু হবে, এমন সম্ভাবনা খুব একটা কেউ দেখছেন না। বোর্ডের পক্ষ থেকে এই সভায় যোগ দিতে যাবেন সিইও রাহুল জোহরি। তিনি আদৌ এ নিয়ে খুব বেশি লড়াই করারও সুযোগ পাবেন কি না, নিশ্চিত নয়। অবসরের পরে ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সৌরভ। সিএবি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ক্রিকেট প্রশাসনের অন্দরমহলে কী হতে পারে, সে সম্পর্কে অবহিত তিনি বলে দিচ্ছেন, ''আইসিসি আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান। বিশ্বকাপ সম্পূর্ণ আলাদা একটি প্রতিযোগিতা। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নয়। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বাতিল করা সম্ভব নয়।'' যোগ করছেন, ''বিশ্বকাপের এখনও অনেক দেরি আছে। তখন দেখা যাবে কী হয়। কিন্তু ভারত বা ভারত সরকারের পক্ষে আইসিসি-তে গিয়ে পাকিস্তানকে নির্বাসিত করার দাবি জানানো খুব কঠিন হবে। এক শতাংশ সম্ভাবনাও নেই সেই দাবি মেনে নেওয়ার।'' সৌরভ মনে করছেন, ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ে ভারতীয় বোর্ড সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু তারা যদি মনে করে, তাদের কথা শুনে আইসিসি পাকিস্তানকে এক ঘরে দেবে, তা হলে ভুল ভাবছে।