অর্থাভাবকে হারাতে খেয়াইবান্দার ব্রহ্মাস্ত্র যৌথ চাষ


কাটোয়া: কারও সামনেই মেয়ের বিয়ে। কিন্তু বিয়ের খরচের জন্য হাতে নেই পর্যাপ্ত টাকা। ফলে তাঁদের ধারদেনা করতে হয় অথবা বাড়ি বাড়ি ঘুরে সাহায্য চাইতে হয়। আবার ধরুন কারও বাড়ির কোনও সদস্য কঠিন রোগে আক্রান্ত। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না৷ তখন অপরের কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া তার উপায় থাকে না। আবার কখনও দেখা যায় টাকার অভাবে আটকে যাচ্ছে মেধাবী ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা। সমাজে এধরনের ঘটনা প্রায়শই চোখে পড়ে। একজনও যাতে অর্থাভাবের শিকার না হন তাই একজোট হয়ে যৌথ চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার খেয়াইবান্দা গ্রামের বাসিন্দারা।

কেতুগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের বিল্বেশ্বর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত খেয়াইবান্দা গ্রামে প্রায় ১০০ পরিবারের বসবাস। অধিকাংশই কৃষিজীবী পরিবার। রয়েছে বেশ কয়েকটি জনমজুর ও ভাগচাষি পরিবার। গ্রামে কয়েকজন সরকারি কর্মচারীও রয়েছেন। গ্রামবাসীরা বছর চারেক আগে বৈঠক করে কিছু জমিতে যৌথচাষের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। সেই থেকে প্রতিবছর প্রায় ১২ বিঘা জমিতে আমন ও বোরো ধানের চাষ করে আসছে যৌথ কমিটি। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, অপরের জমি চুক্তিতে নিয়ে বারোয়ারি কমিটি থেকে চাষ করা হয়। তার জন্য নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রম দিই। গ্রামের প্রত্যেকটা পরিবারকেই পালা করে মাঠে কাজ করতে যেতে হয়। যদি কোনও পরিবার একদিন শ্রম দিতে না পারে তাহলে তাকে একজন মজুরের মজুরি দিতে হয়। ধানের গীজতলা তৈরি থেকে ধান তোলা পর্যন্ত প্রত্যেক পরিবারের লোকজনেরা কাজ করেন৷ এখনও পর্যন্ত ১২ বিঘা জমি চাষ করে প্রতি বছর গড়ে তাঁরা ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা লাভ করেন৷ এবারেও শুরু হয়েছে খেয়াইবান্দা গ্রামের যৌথ কমিটির বোরো চাষ। এই কয়েকদিন গ্রামবাসীরা মাঠেই রান্না করে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন। 

চাষের লভ্যাংশের টাকা দিয়েই গড়া হয়েছে তহবিল৷ বছর বছর সেই টাকা ব্যয় করা হয় দুঃস্থদের জন্য ও গ্রামের উন্নতিকল্পে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই গ্রামের রাস্তা সংস্কারের কিছু কাজ হয়েছে এই চাষের লাভ থেকে। গ্রামে প্রতিবছর দুঃস্থ পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের বইখাতা দেওয়া হয় ওই তহবিল থেকে। গরিব পরিবারের মেয়ের বিয়েতেও সাহায্য করা হয়েছে ওই লাভের টাকা থেকেই। বর্তমান আত্মকেন্দ্রিক সমাজে যৌথ পরিবার দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়৷ এই পরিস্থিতিতে খেয়াইবান্দা যেন যৌথ পরিবারের একটি জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি৷