হিমন্ত বিশ্বশর্মা সারদা থেকে তিন কোটি টাকা নিয়েছেন! সুদীপ্ত সেনের চিঠি দেখিয়ে দাবি মমতার

হিমন্ত বিশ্বশর্মা সারদা থেকে টাকা নিয়েছেন, প্রমাণ দিতে সুদীপ্ত সেনের চিঠি সংবাদ মাধ্যমকে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 



মুখে আগেই বলেছিলেন। অসমের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা যে সারদা কর্তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন, এ বার হাতে নাতে তার 'প্রমাণ' ধরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলবন্দি সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের একটি চিঠি মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমের হাতে দিয়েমুখ্যমন্ত্রী বলেন, ''এই চিঠিতেই হিমন্ত বিশ্বশর্মার টাকা নেওয়ার প্রমাণ রয়েছে।'' একই সঙ্গে তাঁর তোপ, 'বিজেপি করলেই সাত খুন মাফ'। যদিও মমতার এই অভিযোগের পরই হিমন্ত বিশ্বশর্মা টুইট করে বলেন, 'ভিত্তিহীন অভিযোগ'। তিনি তদন্তে সিবিআই-কে সাহায্য করছেন বলেও দাবি করেছেন হিমন্ত।

সিবিআই-এর মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ব্যবহার করছে কেন্দ্র তথা বিজেপি, ধর্নার শুরু থেকেই এই অভিযোগে সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত এই অভিযোগ ঘিরেই কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাত চরমে ওঠে এবং মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নায় বসা। ধর্নার শুরুর দিকেই তিনি অভিযোগ তুলেছিলেন, হিমন্ত বিশ্বশর্মা সারদা কর্তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। তার প্রমাণ তাঁদের কাছে রয়েছে। অথচ সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।মমতার সেই দাবি যে শুধু কথার কথা নয়, তার প্রমাণ দিতেই সুদীপ্ত সেনের চিঠি সংবাদ মাধ্যমকে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এ দিন ধর্না মঞ্চ থেকেই ১৮ পাতার একটি চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর তরফে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই চিঠির ১১ এবং ১২ পাতায় একটি অংশ আলাদা করে 'হাইলাইট' করা। ওই অংশে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন দাবি করেছিলেন, ''প্রায় দেড় বছর ধরে হিমন্ত বিশ্বশর্মা আমাদের কাছ থেকে তিন কোটি টাকা নিয়েছেন। হিমন্তের অফিসের কর্মীদের সই করা রসিদও রয়েছে আমাদের কাছে।''
 
এই অংশকেই হাতিয়ার করে মুখ্যমন্ত্রীর তোপ, বিজেপির বিরুদ্ধে গেলেই পিছনে সিবিআই-ইডি-আয়কর দফতরকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ বিজেপি করলে তাঁদের কিছুই করা হচ্ছে না। হিমন্তের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির বিরুদ্ধে মমতা তোপ দাগেন, ''আমাদের কাছেও অনেক ডকুমেন্ট আছে, থাকে। সাধারণ মানুষ আমাদের কাছে এই চিঠি দিয়ে গিয়েছে। এখানে এরা এই রকম করছে, আর অসমে ওরা কী করেছে দেখুন।''

২০০১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অসমের জালুকবাড়ি কেন্দ্রের কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। ২০১৫ সালেই কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন হিমন্ত। তার পর ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জিতে ফের বিধায়ক এবং অসমে বিজেপি সরকারের মন্ত্রী হন হিমন্ত। বর্তমানে তিনি অসমের পূর্ত, স্বাস্থ্য ও অর্থমন্ত্রকের দায়িত্বে। অর্থাৎ সারদা চিট ফান্ড যখন চলছিল, তখন তিনি বিজেপি নয়, কংগ্রেসে ছিলেন। এই বিষয়টিই উল্লেখ করে মমতার অভিযোগের পর হিমন্ত টুইটারে লেখেন, 'আমার বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রচার করছেন, তার জন্য আমি ব্যথিত। আমি কলকাতার পুলিশ কমিশনারের মতো ভাগ্যবান নই। আমি সিবিআইয়ের তদন্তে হাজিরা দিয়েছি এবং সাক্ষী হিসেবে পূর্ণ সহযোগিতা করেছি। আর সারদা কর্তা যে অভিযোগ তুলেছেন, তা আমি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার অনেক আগের ঘটনা।'

সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার মুখে নিরুদ্দেশ হওয়ার আগে সুদীপ্ত সেন একটি চিঠিলিখে গিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন সময় সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। তার নানা অংশ নিয়ে একাধিক জল্পনা ছড়িয়েছে। কিন্তু সেই অর্থে সারদা কর্তার সেই পূর্ণাঙ্গ চিঠিটি এ ভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী এদিন সেই চিঠিই কার্যত 'ফাঁস'  করে দিলেন। যদিও চিঠিতে সারদা কর্তার দাবির পিছনে সারবত্তা কতটা, এখনও পর্যন্ত তা স্পষ্ট হয়নি।