চা খাওয়ানো হয়েছে সিবিআই অফিসারদের, হলফনামায় জানালেন রাজীব

সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার।


শেক্সপিয়র সরণি থানায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি সিবিআই অফিসারদের চা খাইয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছিল বলে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। জানিয়েছেন, সিবিআই অফিসারদের থানায় আরামে বসার জন্য এবং ফেরার সময়ে নিরাপত্তার জন্য 'পুলিশ এসকর্ট'-এরও বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।
কমিশনারের বাসভবনের সামনে তাদের অফিসারদের হেনস্থার ঘটনার পরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। রাজীব, রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে এবং পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র-র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করে। জবাবে তিন জনেই হলফনামা দিয়ে সিবিআইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আদালতে সিবিআই জানিয়েছে, রাজীব যে সত্যি বলছেন না, তা প্রমাণ করতে ছবি জমা দেবে। রাজীবও জানিয়েছেন, ঘটনার ভিডিয়ো রেকর্ডিং এবং ছবি পুলিশের কাছে রয়েছে।

১৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই অভিযোগ করেছে, সে দিন কলকাতা পুলিশের অফিসারেরা তাদের গাড়ি থেকে অফিসারদের ঘাড় ধরে নামিয়ে পুলিশের গাড়িতে তুলেছে। সিবিআইয়ের গাড়ির চালকের কাছ থেকে গাড়ির চাবি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এক ডিএসপি-র গলা এমন ভাবে পুলিশের এক অফিসার চেপে ধরেন যে তিনি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারতেন। ধাক্কাধাক্কিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন সিবিআইয়ের অতিরিক্ত সুপার। সিবিআইয়ের আরও অভিযোগ, পুলিশের গাড়ি থেকে তিনি যাতে নামতে না পারেন, তার জন্য সারদায় সিবিআইয়ের মূল তদন্তকারী অফিসার, তথাগত বর্ধনের হাত চেপে ধরে রাখেন পুলিশের এক অফিসার। হলফনামায় এ-ও বলা হয়েছে, এক জন পুলিশ অফিসারের বাড়িতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ছুটে যাওয়া 'খুবই অস্বাভাবিক, নজিরবিহীন'। সে দিন কমিশনারের বাড়ির ভিতরে থাকা 'যা কিছু' রাজ্য পুলিশ বাঁচাতে চেয়েছে, তা তারা সফল ভাবে বাঁচাতে পেরেছে। সেই কারণে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে অমান্য করতেও তারা কুণ্ঠা বোধ করেনি।
অন্য দিকে, রাজীবের অভিযোগ, সিবিআই তাঁর বাসভবনে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে চড়াও হয়। সে দিনই সিবিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর পদে এম নাগেশ্বর রাওয়ের শেষ দিন ছিল। পরের দিনই নতুন সিবিআই ডিরেক্টরের দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল। রাজীবের প্রশ্ন, এত বড় সিদ্ধান্তের জন্য কেন এক দিনও অপেক্ষা করা গেল না?

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ধর্নায় বসার যে অভিযোগ উঠেছে, তার প্রেক্ষিতে মুখ্যসচিব, ডিজি ও কমিশনার জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নাস্থলের পাশেই রয়েছে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ চৌকি। সেটি 'সরকারি ভবন'। তাঁরা সেখান থেকে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করছিলেন।
সিবিআইয়ের অভিযোগ ছিল, শেক্সপিয়র সরণি থানায় তাঁদের মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। রাজীব উল্টে জানিয়েছেন, পুলিশই ৮টি সিম-কার্ড সহ মোবাইল, দু'টি ইন্টারনেট-সংযোগ সহ টেলিফোন দিয়ে সিবিআইকে সাহায্য করেছে।  এ ছাড়া, থানায় যাওয়ার জন্য সিবিআই অফিসারদের স্রেফ অনুরোধ করা হয়েছিল। সে কারণে সিবিআইকে ছ'টি গাড়িও দেওয়া হয়েছিল।

সিবিআইয়ের অভিযোগ, তাদের যুগ্ম-অধিকর্তা পঙ্কজ শ্রীবাস্তবের বাড়ি পুলিশ ঘিরে ফেলেছিল। রাজীবদের যুক্তি, শ্রীবাস্তবের বাড়িতে গন্ডগোল হতে পারে খবর পেয়ে তাঁর নিরাপত্তার জন্য বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। অথচ শ্রীবাস্তব তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে টিভি চ্যানেলে অভিযোগ করেন।