কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খুনে গ্রেফতার ২, সুপারি কিলার দিয়েই খুন, অনুমান তদন্তকারীদের

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বিধায়কের স্ত্রী রূপালী বিশ্বাস হালদার।

সুপারি কিলার দিয়েই খুন করা হয়েছে তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসকে। এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা। এই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সুজিত মণ্ডল এবং কার্তিক মণ্ডল নামে দু'জন স্থানীয় বাসিন্দাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া, এখনও পর্যন্ত এক জনকে আটক করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের আরও ধারণা, এলাকা সম্পর্কে আততায়ী রীতিমতো ওয়াকিবহাল। কারণ, ওই এলাকার পরিচিতি না থাকলে এ ভাবে অনুষ্ঠানের ভিতরে ঢুকে সত্যজিৎবাবুকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে খুন করে এত দ্রুত পালানো সম্ভব হত না।
শনিবার রাতে নদিয়ার হাঁসখালিতে সরস্বতী পুজোর একটি অনুষ্ঠানে খুন হন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। ফুলবাড়ি এলাকায় নিজের বাড়ির সামনে পাড়ার ক্লাবের অনুষ্ঠান চলাকালীন পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে সত্যজিৎবাবুর কপালে গুলি করে আততায়ী। ঘটনায় আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে যান উপস্থিত সকলে। আর সেই সুযোগে পালায় আততায়ী। 

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরই ওই অনুষ্ঠান থেকে সুজিত এবং কার্তিককে পালিয়ে যেতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ছাড়া, খুনের পর থেকে এখনও এলাকাছাড়া অভিজিৎ পণ্ডারী নামে স্থানীয় এক যুবক। খুনের তদন্তে নেমে রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সিআইডি-র একটি দল। এই খুনের পিছনে কে বা কারা জড়িত, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সত্যজিৎবাবুর স্ত্রী রূপালী বিশ্বাস হালদার দাবি করেছেন, এর পিছনে স্থানীয় কোনও যুবক জড়িত থাকতে পারে। তাঁর কথায়, "স্বামীর কাছ থেকে শুনেছিলাম, ক'দিন আগেই একটি ছেলে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছে। এ ঘটনার পিছনে তার হাত থাকতে পারে।"

খুনের কারণ নিয়েও নানা তত্ত্ব উঠে আসছে। এরই মধ্যে এই খুন নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বিজেপি-ই সত্যজিৎবাবুকে খুন করিয়েছে। বিশেষ করে এর পিছনে বিজেপি নেতা, প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়ের হাত রয়েছে বলে তাঁদের দাবি। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকে আঙুল তুলেছেন মুকুল রায়।

তৃণমূল নেতৃত্ব একে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে দাবি করলেও বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

প্রথমত, এই এলাকাটি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে গরু পাচার থেকে শুরু করে একাধিক সংগঠিত অপরাধ হয়। ফলে এলাকায় সংগঠিত অপরাধীদের দলেরও রমরমা রয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকার অপরাধের সঙ্গেও এই খুনের ঘটনা যোগ থাকার সম্ভাবনা থাকতে পারে। বছর দেড়েক আগে এই হাঁসখালিতেই দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে খুন করা হয় আর এক তৃণমূল নেতা দুলাল বিশ্বাসকে।

দ্বিতীয়ত, এই এলাকায় তৃণমূলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে চাপা দ্বন্দ্ব রয়েছে। ফলে এই খুনের ঘটনার কারণ হিসাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্বকেও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি, বছর খানেক ধরে এলাকায় বিজেপি-র সংগঠনও জোরাল হয়েছে। ফলে এটি রাজনৈতিক রেষারেষির জের কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।