দিল্লি দখলের ডাক দিয়ে আজ রাজধানীতে ধর্নায় তৃণমূল নেত্রী


নয়াদিল্লি: দিল্লি চলোর ডাক দিয়ে রাজধানীতে পৌঁছে গিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী৷ সেখানেই ধর্না কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন তিনি৷ বিরোধী জোটের বার্তা নিয়ে সেই মঞ্চেই আসতে পারেন ফারুক আবদুল্লা থেকে কানিমোঝি, গুজরাতের জিগনেশ থেকে আরজেডি বা উত্তর পূর্বের বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা৷ ভোটের আগে দিল্লি থেকেই মোদী হঠাও আন্দোলন জোরদার করতে চাইছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী৷

গণতন্ত্র বাঁচাও-এর দাবি নিয়ে বুধবার রাজধানীতে ধর্নায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ সুপ্রিমোও৷ গোর্খা ভবনের উদ্বোধণের পর সেখানে যেতে পারেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ পরে কলকাতার মেট্রো চ্যানেল থেকে যে সংবিধান রক্ষার ডাক দিয়েছিলেন তিনি সেই ধর্নাতেই বসবেন মমতা৷ যা ঘিরে বিরোধী রাজনীতি পোক্ত হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ৷

গত বছর ২১শের মঞ্চ থেকেই ১৯শে দিল্লি দখলের ডাক দেন জোড়ফুল শিবিরের সর্বেসর্বা৷ মোদী দেশের সর্বনাশ করছে৷ গণতন্ত্রের পক্ষেও বিপদ বিজেপি সরকার৷ দেসের বিভাজনের রাজনীতি চলছে বলে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন তিনি৷ মোদীর সরকারকে উৎখাতে মমতার ফরমুলা ছিল একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী৷ সেই লক্ষ্যেই বিরোধী ঐক্যের কথা বলেন তিনি৷

ভোট যত এগিয়েছে বিরধী ঐক্যের গুরুত্ব ততই ধরা দিয়েছে বিজেপি বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির কাছে৷ জোটের বার্তা নিয়ে এগিয়ে আসেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী৷ সেই ডাকেই সাড়া দেন বুয়া-বাবুয়া থেকে শারদ পাওয়ার, স্ট্যালিন, চন্দ্রবাবুরা৷ বিরোধী জোট পোক্ত করতে এর আগে বাড়ে বাড়ে দিল্লি ছুটে গিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ কথা বলে চেষ্টা করেছেন রাজনৈতিক আস্থা অর্জনের৷

শুধু কথা বলাই নয়, ১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেডে মমতার নেতৃত্বেই কলকাতায় হয় বিরোধী জোটের সমাবেশ৷ সেখানে হাজির ছিলেন মোদী বিরোধী বিরোধী রাজনৈতিক দলের তাবড় নেতারা৷ ছিলেন বাজপেয়ী আমলের দুই মন্ত্রীও৷ এছাড়াও বিজেপি সাংসদ 'বিহারী বাবু' শত্রুঘ্ন সিনহাকে হাজির করিয়ে তাক লাগিয়ে ছিলেন মমতা৷ ওই মঞ্চ থেকে সবাই একযোগে মোদী বিরোধীতায় সরব হন৷ ডাক দেন দেশ বাঁচাতে দিল্লিতে পরিবর্তনের৷

এরপরই অখিলেশ থেকে মায়াবতী৷ সিবিআই-য়ের জুজুর সামনে পড়তে হয় তাদের৷ ভয় পেয়েই মোদী সরকার কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে বলে নিন্দায় ফেটে পড়েন বিরোধী শিবিরের নেতারা৷ এক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন অগ্রগন্য৷ সিবিআইয়ে বিরুদ্ধে সরবের মাঝেই গত ৩রা ফেব্রুয়ারি সারদা তদন্তে কলকাতার নগরপালের বাড়িতে যায় কেন্দ্রীয় দোয়েন্দা সংস্তার আধিকারীকরা৷ বিরোধীতায় গর্জে ওঠেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী৷ চরমে ওঠে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত৷

মোদী সরকার সিবিআইকে দিয়ে সংবিধান ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেন মমতা৷ তিলোত্তমার রাজপথে ধর্নায় বসেন তিনি৷ সেই মঞ্চেই সামিল হন, সমাজবাদী পার্টির কিরণময় নন্দ থেকে আরজেডির তেজস্বী যাদব, ডিএমকের কানিমোঝি, অন্ধপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু৷ ফোন করে কেন্দ্র বিরোধী দর্নার পাশে থাকার কতা বলেন রাহুল গান্ধী সহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা৷ পরে রাজীবকাণ্ডে কোর্টের নির্দেশে নৈতিক জয়ের কথা বলে ধর্না তুলে নেন মমতা৷ তবে তাঁর হুঁশিয়ারি ছিল ১৩ তারিখ দিল্লি গিয়ে ফের হবে ধর্না৷ নির্ধারণ হবে জোটের পরবর্তী পদক্ষেপ৷

একদিকে মোদী সরকার বিরোধী আন্দোলনকে তীব্র করা, অন্যদিকে সেই আন্দোলনে বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক দলগুলিকে সামিল করা৷ সিংহাসন থেকে পদ্ম ফুল উপড়োতে আপাতত মমতা এই দ্বিবিধ কৌশল৷ রাজনৈতিক বিশেষেজ্ঞদের মতে, নিজের রাজ্যে কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলন করে মানুষের কাছে বিচার চাইছেন তিনি৷ অন্যদিকে সেই আন্দোলনকে রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন রাজধানীর বুকে৷ শুধু তাই নয়, তাতে সামিল করছেন অন্যদের৷ ফলে জোট যে পোক্ত, এবং দেশ শাসনে প্রস্তুত তা প্রমাণে মরিয়া তৃণমূল সুপ্রিমো৷ এছাড়া জোটের স্টিয়ারিং যে তাঁর হাতেও রয়েছে বকলমে সেই বার্তাও দিতে চান সবাইকে৷

আন্দোলনের পর আন্দোলন৷ রাজধানীর বুকে মোদী বিরোধী স্লোগান৷ ভোটযুদ্ধের ফাইনালের আগে বিরোধীদের ধর্না, অনশনে কী স্নায়ুচাপ বাড়ছে মোদী-শাহ জুটির? গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য জোটের জটেই হারাবে বিরোধীদের ঐক্য৷ বাড়বে বিজেপির ভোট৷