‌বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড়, কিন্তু ছেলে ফিরছেন কফিনবন্দি হয়ে


তেহট্ট:‌ নদিয়ার পলাশিপাড়ার হাঁসপুকুরিয়া তিলিপাড়া গ্রামের বিশ্বাস পরিবারে এখন শুধু হাহাকার। বৃহস্পতিবার পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় নিহত জাওয়ানদের মধ্যে আছেন পলাশীপাড়া থানার সুদীপ বিশ্বাসও।
গ্রামবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর শিলিগুড়িতে সিআরপিএফের ৯৮ নং ইউনিটে যোগ দেন সুদীপ। সহজ, সরল, সাদাসিধে ছেলে হিসেবেই গ্রামে পরিচিতি ছিল সুদীপের। একমাত্র বোনের বিয়ে দিয়েছেন। তাঁর নিজের বিয়ের কথাবার্তাও চলছিল। বিয়ের জন্য নতুন করে বাড়িঘর মেরামতির কাজও চলছিল। কিন্তু এর মধ্যেই সব শেষ। সুদীপের বাবা সন্ন্যাসী বিশ্বাস বলেন, '‌বৃহস্পতিবার বিকেলে ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়। সে জানায় জম্মু থেকে সকালে রওনা হয়ে কাশ্মীরের উদ্দেশে যাচ্ছে।' তিনি আরও জানান, ওই ফোনের পর থেকে ছেলের সঙ্গে আর কোনও কথা হয়নি। সুদীপের বৌদি সুলেখা বিশ্বাস বলেন, '‌বৃহস্পতিবার বিকেল চারটের পরে মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোনে হিন্দিতে জিজ্ঞেস করা হয় সুদীপের শরীরে কোন চিহ্ন আছে কিনা। কোথায় কোথায় তিল আছে?‌'‌ এরমধ্যেই তিনি টিভি–র খবরের দিকে ভাল করে দেখতে থাকেন। বুঝতে পারেন কাশ্মীরে বড় কোনও ঘটনা ঘটেছে। ফোনটি আসার পরে অবশ্য তার বুঝতে কোনও অসুবিধে হয়নি যে, বাড়ির ছেলে সুদীপের কোনও বড় বিপদ হয়েছে। তার পরেও বেশ কয়েকবার ফোন আসে। কিন্তু একবারের জন্যও বাড়ির লোকদের জানানো হয়নি জঙ্গি হামলায় সুদীপ শহিদ হয়েছেন। এরপর শুক্রবার সকালে দিকে বাড়িতে পুলিশ আশাতে বুঝতে বাড়ির লোকেরা সমস্তটা বুঝতে পারেন। ভেঙে পড়েন কান্নায়। সুদীপের ভগ্নিপতি সমাপ্ত বিশ্বাস বলেন, '‌সকাল থেকেই আমাদের পরিবারের সঙ্গে সিআরপিএফ–এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছিল। সিআরপিএফ–এর পক্ষ থেকে মৃতের পরিবারকে জানানো হয়, '‌সুদীপের মৃতদেহ কাশ্মীর থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতা আসবে। তারপর বিমানবন্দর থেকে সিআরপিএফের কনভয়ে দেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রতিবেশী সাদেক আলি শেখ বলেন, '‌গ্রামের সরল সাদাসিধে ছেলেটার এইভাবে মৃত্যু সংবাদ পাব স্বপ্নেও ভাবিনি। মিশুকে ছেলেটা ছুটিতে এসে এক মাস আগেই কাজে যোগ দিল। এরই মধ্যে উগ্রপন্থিদের আত্মঘাতী হানায় তরতাজা একজন ভারতীয় সৈনিকের জীবন অবসান হল। এই ধরনের কাপুরুষ বর্বরোচিত কাজ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না এদের কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি দাবি করছি।'‌ এদিকে, ছেলের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা–বাবাও। সুদীপের মা মমতা বিশ্বাস মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। ছেলের বিয়ে দেওয়া হল না, সেকথাও উল্লেখ করেন। এদিকে, তৃণমূল তেহট্ট ২ ব্লকের সভাপতি বলেন, '‌সুদীপ সাদাসিধে ছেলে ছিল। সোজা সাপটা কথা বলত। বারবারে জওয়ান এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। ভারত সরকারের উচিত এই হামলার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। তবেই নিহত পরিবার–সহ দেশের মানুষের মনোবল সুদৃঢ় হবে। যোগ্য জবাবই এর একমাত্র উত্তর। তার বিকল্প কিছু নেই।'‌