দিল্লির পর আর এক নির্ভয়া, লড়াই করলেন আড়ালে থেকেই


দিল্লিতে নির্ভয়া ধর্ষণ কাণ্ডের ঘটনা এখনও দেশবাসীর মন থেকে মুছে যায়নি। ২০১২ সালের ডিসেম্বরের রাতে বাসের মধ্যেই নৃশংসভাবে ধর্ষিত হতে হয়েছিল মেডিক্যালের ছাত্রীকে। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল ২০১৬ সালের ২৯ মে। সেক্টর ফাইভ থেকে এক বার ডান্সারকে অপহরণ করে গাড়িতেই চলে গণধর্ষণ। বারংবার গণধর্ষণ করা হয় নেপালের বাসিন্দা ওই তরুণীকে। এই ঘটনায় ধৃত ৪ জনকে ইতিমধ্যেই দোষী সাব্যস্ত করে ২০ বছরের সাজা শোনানো হয়েছে। নির্ভয়া কাণ্ডের পর ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ডি (‌গণধর্ষণ মামলা)‌ আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছিল, সেই নতুন আইনেই এই প্রথমবার দোষী চারজনকে সাজা দেওয়া হল।

জানা গিয়েছে, নেপালের ওই তরুণী একজন বার ডান্সার। ২০১৬ সালের ২৯ মে রাতে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার জন্য সেক্টর ফাইভে এক রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। সেখান থেকেই তাঁকে লিফ্ট দেওয়ার নাম করে অপহরণ করা হয়। গাড়ির মধ্যেই চলে গণধর্ষণ। ভোর পর্যন্ত ক্রমাগত গণধর্ষণের পর আক্রান্ত তরুণী আচ্ছন্ন হয়ে যান। নেপালের বাসিন্দা হলেও বাংলা বুঝতে পারতেন একটু আধটু। সেখান থেকেই তিনি বুঝতে পারেন তাঁকে মধ্যমগ্রামের কোথাও নিয়ে গিয়ে গোপনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে তাঁকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করছে ধর্ষকরা। যেমনটা দিল্লির গণধর্ষণকাণ্ডে হয়েছিল। বিষয়টি বোঝা মাত্রই ওই তরুণী চলন্ত গাড়ি থেকে ঝাঁপ মারেন। স্থানীয় ট্যাক্সি চালক এবং পুলিসের সহায়তায় বিধাননগর মহিলা পুলিসের কাছে ওই তরুণী গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় নেপালের আর এক নির্ভয়ার লড়াই। দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের তরুণীকে যেখানে দেশবাসীরা স্যালুট দিয়েছিল তাঁর লড়াইয়ের জন্য, এই ঘটনায় কিন্তু তা হয়নি। এই মামলার সরকারি পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, বিপক্ষের আইনজীবীরা বহুবার তরুণীকে জেরার নামে হেনস্থা করে। আজে–বাজে প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। এমনকী প্রশ্ন তোলা হয় তাঁর চরিত্র নিয়েও। কারণ ওই তরুণী ছিলেন বার ডান্সার।

কিন্তু এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মধ্যেও আক্রান্ত তরুণী তাঁর লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। সরকারি পক্ষের আইনজীবী জানান, তাঁদের পক্ষ থেকে আদালতে ২৩ জন সাক্ষীকে হাজির করা হয়েছিল। জানা গিয়েছে, মামলার শুনানি চলাকালীন আক্রান্তকে এমন ভয় দেখানো হয় যে তাঁর বয়ান রেকর্ডের পরই তিনি নেপালে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু অবশেষ নির্ভয়ার মতো তিনিও শেষ হাসি হাসলেন। দাঁতে দাঁত চেপে দোষীদের শাস্তি দিতে তরুণী একসময় মরিয়া হয়ে ওঠেন।

ঘটনার দু'‌বছরের মধ্যে সাজা পেল দোষী চারজন। কিভাবে এই গোটা ঘটনাটা মোড় নিল, সেই প্রসঙ্গ তুলে বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, মেয়েটি যখন গাড়ি থেকে ঝাঁপ মেরেছিল, তখন দোষীদের মধ্যে একজনের মোবাইল তাঁর সঙ্গে বাইরে পড়ে যায়। অন্যদিকে পুলিস যখন অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে তখন মেয়েটির মোবাইল আসামীদের কাছ থেকে পাওয়া যায়। ইলেকট্রনিক্স এভিডেন্সে এটা প্রমাণিত হয় যে ওই দু'‌টি মোবাইল সেই সময় একই লোকেশনে ছিল। এছাড়াও গাড়ি থেকে অন্তর্বাসের টুকরো এবং শার্টের বোতাম পাওয়া গিয়েছিল। ফরেন্সিকে যা প্রমাণিত হয় অন্তর্বাসের টুকরোটি মেয়েটির এবং ওই বোতামটি আসামিদের মধ্যে একজনের পোশাকের।