উঠে যাচ্ছে মেট্রোর সময় সূচি, এবার বসবে রিয়েল টাইম ইন্ডিকেটর


মেট্রো ধরার জন্য হুড়মুড়িয়ে স্টেশনে ঢুকছেন। ডিসপ্লে বোর্ডে দেখলেন কবি সুভাষগামী ট্রেন ৪টে ১৭য়। সতেরো গেল, আঠারো গেল, উনিশ গেল। ট্রেন আর আসে না। প্ল্যাটফর্মে ক্রমশ ভিড় বাড়ছে। সেই ৪টে ১৭-র ট্রেন এল যখন, ঘড়িতে তখন ৪টে ২৬। এদিকে পরবর্তী ট্রেন আসার নির্ধারিত সময় ৪টে ২৭। তার মানে কি এক মিনিট বাদে আবার একটা কবি সুভাষগামী ট্রেন আসবে?


শুধু আপনার নয়, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা আপনার মতো হাজারো অধৈর্য্য যাত্রীর মনে একই প্রশ্ন। যদিও তার উত্তর খোঁজার সময় বা ইচ্ছা কারও নেই। ঠেলেঠুলে ওই ট্রেনেই সবাই উঠলেন। ভিড়ের চাপে দমবন্ধ হওয়ার দশা। দুটো ট্রেনের প্যাসেঞ্জার একটার মধ্যে উঠলে যা হয় আর কি!


যাত্রীদুর্ভোগের এই বৃত্তান্ত কলকাতা মেট্রোয় এখন নিত্যনৈমিত্তিক। বলতে গেলে মানুষের গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। তিনটের প্যাসেঞ্জার একটা ট্রেনে গুঁতোগুঁতি করছেন এমন ঘটনাও ঘটছে আকছার। কর্তৃপক্ষেরও সমস্যাটা অজানা নয়। যার আপাত সুরাহায় কলকাতা মেট্রো চলাচলে 'সময় সারণি' (টাইমটেবিল) তুলে দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে। মানে স্টেশনে ঢোকার মুখে আর দেখা যাবে না পরের ট্রেন ক'টার সময়। টাইম টেবিলের পরিবর্তে চালু হবে রিয়েল টাইম ইন্ডিকেটর।  

ব্যাপারটা ঠিক কী?

এতদিন মেট্রো চলত ধরাবাঁধা সময় অনুযায়ী। যাত্রী স্টেশনে ঢুকে ডিসপ্লে বোর্ডে দেখতে পেতেন, কটার সময় পরবর্তী ট্রেন প্ল্যাটফর্মে আসবে। এখন ডিসপ্লে বোর্ড দেখাবে, কতক্ষণ বাদে ট্রেন আসবে। যেমন আপনি এবার স্টেশনে নেমে ডিসপ্লে বোর্ডে আর দেখবেন না যে, ৪টে ১৭ মিনিটে ট্রেন আছে। ট্রেন আসার মিনিট তিনেক আগে জানতে পারবেন ট্রেন ঢুকছে। একইসঙ্গে ঢোকার মুহূর্তে আপনাকে জানাতে কাউন্টডাউন সিস্টেম তো থাকবেই। সেকেন্ডের হিসেব কমতে থাকবে তাতে। মেট্রোসূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই মেট্রোর টাইমটেবিল তুলে দেওয়া নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। তার বদলে এই রিয়েল টাইম ইনডিকেটর চালু করার পরিকল্পনা করেছে কর্তৃপক্ষ। এক কর্তার কথায়, চেষ্টা চালানো হচ্ছে দ্রুত নয়া এই পদ্ধতি চালু করার। কিন্তু একটু তো সময় লাগবে। আমাদের সিস্টেমে বদল আনা হচ্ছে।


কিন্তু সময় সারণি ঘিরে কেন এই জটিলতা?

মেট্রো সূত্রে খবর, প্রথমত এই টাইমটেবিল যখন তৈরি হয়েছিল, তখন ৩০০ ট্রিপ ট্রেন চলত। ফলে সেইমতোই তৈরি হয়েছিল সময় সরণি। কিন্তু এখন তা কমিয়ে ২৮৪ ট্রিপ করা হয়েছে। ফলে মেলে না টাইমটেবিল। তাছাড়া এসপ্ল্যানেডে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের কারণে ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। যেখানে ৩০ কিমি বেগে স্টেশনে ঢুকত ট্রেন এবং বেরিয়ে যেত ৪৫ কিমি বেগে। সেই গতিই এখন ১০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় থাকছে। ফলে এসপ্ল্যানেড থেকে চাঁদনি এবং চাঁদনি থেকে এসপ্ল্যানেড যেতে আগে লাগত  এক মিনিট, সেই সময় বেড়ে হয়েছে তিন মিনিট। হিসেব মতো ট্রেনপিছু দু'মিনিট অতিরিক্ত লাগলে ৫৬৮ মিনিট গোটা দিনে বেশি লেগে যায় মেট্রোর। তাছাড়া যাত্রীচাপে দরজা বন্ধ না হওয়া। কোনও স্টেশনে একটু বেশি রেক দাঁড় করানো, যান্ত্রিক সমস্যায় গতি কমে যাওয়ায় দুই ট্রেনের সময়ের ব্যবধান অনেকক্ষেত্রে দুই বা তিন মিনিটের হয়ে দাঁড়ায়। তখনই একটি ট্রেন বাতিল করা হয়। যাত্রীরা টাইম টেবিল দেখে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকলেও সেই সময় ট্রেন আসে না। অনেক সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে দু'তিনটি ট্রেনও বাতিল করা হয়। মেট্রোর এক কর্তা জানান, "নামেই এখন ২৮৪ ট্রিপ চলছে। অধিকাংশ দিনই তা চালানো যায় না। ২৭২-২৮০ ট্রিপও চলে বহু দিন। কারণ সময়ের হেরফেরে দুটো ট্রেনের ব্যবধান খুব কমে যায়।" তবে সেই কর্তার কথায়, "যাই হোক না কেন। যাত্রী তো বেড়েই যাচ্ছে। এই ট্রিপেই মঙ্গলবার পৌনে সাত লক্ষ যাত্রী চলাচল করেছেন। ফলে যতই ক্ষোভ থাক। মেট্রোই শহরের লাইফলাইন।"