৭ বছর পর বাবা হওয়ার সুখ কেড়ে নিল জঙ্গিরা, পুলওয়ামায় শহিদের ট্র্যাজিক কাহিনি


নাম সুখিন্দর সিং। ৭৬ ব্যাটেলিয়নের জওয়ান ছিলেন তিনি। বিয়ে হয়েছে সাত বছর। এতদিন বহুচেষ্টা করেও সন্তান হয়নি তাঁর। কিন্তু হাল ছাড়েননি। শেষ পর্যন্ত গত বছরই তিনি সুখবর পান। জানতে পারেন, বাবা হতে চলেছেন তিনি। সাতমাস আগে ছেলের বাবা হয়েছেন তিনি। কিন্তু সন্তানসুখ ভাগ্যে সইল না। বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গিহানায় তিনি শহিদ হন।

এমন অনেক শোকের ছায়া আজ ছড়িয়ে রয়েছে দেশের আনাচকানাচে। ওড়িশার সিআরপিএফ জওয়ান মনোজ বহেরা ছুটি কাটিয়ে গতমাসেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। এক বছর আগে তাঁর মেয়ে হয়েছিল। নভেম্বরে মেয়ের জন্মদিন কাটাতে গ্রামে গিয়েছিলেন তিনি। জানুয়ারিতে যোগ দেন কাজে। বৃহস্পতিবার সকালেই স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়। মেয়ের খবর নেন তিনি। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান। তারপরই খবর আসে, মনোজ আর ইহলোকে নেই। এই রাজ্য থেকে প্রাণ গিয়েছে আরও একজনের। তাঁর নাম প্রসন্ন কুমার শাহু। তিনি প্রায় দু'মাস নিজের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন কাশ্মীর।

স্ত্রী নীরজার সঙ্গে কথা বলছিলেন প্রদীপ কুমার। বয়স ৩০। ৪৪ সিআরপিএফ ব্যাটেলিয়ানের সদস্য। বেশ খোশমেজাজেই ছিলেন তিনি। স্ত্রীও বহুদিন পর স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে পেরে বেশ খুশি। হঠাৎই ফোন যায় কেটে। তখনই বিস্ফোরণ হয় কনভয়ে। নিজের কানে বিস্ফোরণ শুনেছিলেন স্ত্রী? তাঁর অবস্থা এখন বেশ খারাপ। কথাই বলতে পারছেন না। শুধু এটুকুই তিনি বলতে পারছেন, ১০ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। এমন হবে কে ভেবেছিল!

পঞ্জাবের তরণ তারান জেলায় বাড়ি শহিদ সুখিন্দর সিংয়ের। সেই বাড়িতে এখন শোকের ছায়া। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ফোন করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন বিকেলে আবার ফোন করবেন। সেই ফোন আর আসেনি। মাত্র ন'মাস আগে তিনি কনস্টেবল থেকে হেড-কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সেই খুশির আমেজে  ফিকে হয়ে গেল দুঃসংবাদে।

একই অবস্থা শহিদ তিলক রাজের পরিবারেরও। হিমাচল প্রদেশের এই যুবক ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে বাড়ি এসেছিলেন। ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি কাজে যোগ দেন। আর ১৪ তারিখেই ইহলোক ত্যাগ করলেন তিনি।

১০ ফেব্রুয়ারি ছুটি কাটিয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের শ্যাম বাবু। পুলওয়ামার জঙ্গিহানায় তিনিও শহিদ হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশেরই আর এক জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন এই জঙ্গিহানায়। গোটা উত্তরপ্রদেশ থেকে মোট ১২ জন জওয়ান পুলওয়ামার জঙ্গিহানায় শহিদ হয়েছেন।