কেন্দ্রে বাড়তি পরীক্ষার্থী, স্কুলের উঠোনে প্যান্ডেল করেই চলল পরীক্ষা


খড়গপুর: বাইরে থেকে হঠাত্‍ দেখলে মনে হবে কোনও অনুষ্ঠান বাড়ির প্যান্ডেল৷ চারদিকে রঙিন কাপড়ে মোড়া৷ প্যান্ডেলের উপরে ত্রিপল৷ মাঝখান দিয়ে পার্টিশান করে দুটি ঘরের মত তৈরী করা হয়েছে গোটা জায়গাটি৷ আর এই প্যান্ডেলে বসেই পরীক্ষা দিতে হল এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের৷ ব্যতিক্রমী এই ছবি ধরা পড়ল ডেবরা ব্লকের পাঁচগেড়িয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে৷

বিদ্যালয় প্রাঙ্গনের ভেতরে তৈরী করা প্যান্ডেলে বসেই মঙ্গলবার পরীক্ষা দিলেন ৯৭ জন পরীক্ষার্থী৷ এই বিদ্যালয়ে ডেবরার চারটি বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা এবারে পরীক্ষা দিতে এসেছেন৷ এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় এই বিদ্যালয়ে ডেবরা ব্লকের হরিমতি সারস্বত বিদ্যামন্দির, আলোককেন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাটনা বিবেকানন্দ শিক্ষ নিকেতন ও বৌলাসেনী বিবেকানন্দ শিক্ষা 
নিকেতনের পড়ুয়াদের সিট পড়েছে৷ এই চারটি বিদ্যালয়ের মোট ১৪৬ জন পরীক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে হাজির হয়েছে৷ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীকক্ষে ৪৯ জন পরীক্ষার্থীর স্থান সংকুলান করা গিয়েছে৷ আর বাকি ৯৭ জনের ঠাঁই হয়েছে এই প্যান্ডেলে৷ প্যান্ডেলটিকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে৷ তার একটিতে বসেছেন ৫০জন৷ আর একটিতে বসেছেন ৪৭ জন৷ এই অস্থায়ী জায়গায় আলো ও পাখার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রের কথায়, তারা ভাবতেও পারেনি এরকম এক পরিবেশে পরীক্ষা দিতে হবে৷ তাদের আশংকা, হঠাত্‍ বৃষ্টি নামলে পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটতে পারে৷

সন্তানদের এভাবে পরীক্ষা দিতে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন অভিভাবকেরা৷ এমনকী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আলোককেন্দ্র উচ্চ মাধামিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিখিল মণ্ডলও৷ তাঁর অভিযোগ, নিজের সাতাশ বছরের চাকরি জীবনে এই ঘটনা কখনও দেখেন নি৷ জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় এইভাবে পড়ুয়াদের সমস্যার মুখে ফেলে দেওয়া ঠিক হয়নি৷ জায়গা না হলে, পাশের যে কোনও একটি বিদ্যালয়ে বাকি পরীক্ষার্থীদের পাঠিয়ে দেওয়া যেত বলেও পরামর্শ তাঁর। যদিও গোটা ঘটনায় কার্যত উদাসীন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক৷ ঘটনার বিষয়ে কেউ কোনও সদুত্তর দিতে পারেন নি৷ পরীক্ষাকেন্দ্র পাঁচগেড়িয়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহরলাল বারিক এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বরং উলটে বিদ্যালয় চত্বর থেকে সাংবাদিকদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার জন্য ফতোয়া জারি করেছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ উঠেছে। আর প্রধান শিক্ষকের এই ভূমিকায় অতি উৎসাহী 
হয়ে ডেবরার হরিমতি সারস্বত বিদ্যামন্দিরের এক শিক্ষক অসীম মাইতি সাংবাদিকদের সঙ্গে বচসায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন৷ এমনকি তিনি বিডিওর সঙ্গে কথা বলার সময়েও দুই সাংবাদিকের গায়ে হাত দিয়ে কার্যত সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ৷ নিজেকে ব্লক কনভেনরের পরিচয় দিয়ে দাবি করেন, তাঁর দায়িত্বে ডেবরা ব্লকের আটটি বিদ্যালয় রয়েছে৷ তাই যাকে খুশি পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁরই হাতে।

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমর শীল অবশ্য দাবি করেছেন, প্যান্ডেলে পরীক্ষার্থীরা অনেক ভালভাবে পরীক্ষা দিয়েছেন৷ তবে কীভাবে এই পরিস্হিতি তৈরী হল, সেই ব্যাপারে তিনি কোনও মন্তব্যে রাজি হন নি৷ বিডিও পিণ্টু ঘরামি আশ্বাস দিয়েছেন, প্যান্ডেলের পরীক্ষা দেওয়ার বিকল্প উপায় খোঁজার চেষ্টায় রয়েছে প্রশাসন।