অসুস্থ বড়মার জন্য এ বার সাম্মানিক ডিলিট


মতুয়া সম্প্রদায়ের বড়মা বীণাপাণিদেবীকে সাম্মানিক ডিলিট দেবে কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়। আজ, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ওই ঘোষণা করার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী কমিটির বৈঠকেই বড়মা-কে এই সম্মান দেওয়ার প্রস্তাব উঠে আসে। বৈঠকে প্রায় সকলেই সহমত পোষণ করলে সিদ্ধান্ত পাকা করে রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। রাজ্যপালও সেই অনুমোদন দিয়ে দিয়েছেন।

লোকসভা ভোটের আগে মতুয়া মন পেতে তৎপর হয়েছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে গিয়ে বড়মা'র সঙ্গে দেখা করেছেন। তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারও যে মতুয়াদের কাছে রাখতে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে তারই ইঙ্গিত মিলছে বলে রাজনৈতিক মহলের অনেকের ধারণা। উত্তরবঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রভাবও রয়েছে। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, "বড়মা বীণাপাণি দেবী একটি জনজাতির প্রধান। তাঁকে ডিলিট দেওয়ার অর্থ জনজাতি রাজনীতিকে উস্কে দেওয়া। এমনটা না হলেই ভাল হত।" সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের বক্তব্য, ''বড়মার ডিলিট পাওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তবে এর পিছনে রাজ্য সরকারের ইন্ধন কাজ করে থাকতে পারে। ভোটের আগে এটা বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে যে, বড়মা শাসক দলের সঙ্গে রয়েছেন।'

তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, "ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আরও আগেই বড়মাকে ডিলিট দেওয়া প্রয়োজন ছিল। সিদ্ধান্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানাই।" বনগাঁর তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের কথায়, ''বড়মার ডিলিট পাওয়াটা আনন্দের বিষয়। সারা জীবন তিনি মানুষের জন্য যা কাজ করেছেন, তার স্বীকৃতি। তবে তিনি এখন খুবই অসুস্থ। ফলে, আনন্দ করার মতো মানসিক অবস্থা আমাদের নেই।'' ঘটনাচক্রে, গুরুতর অসুস্থ বড়মা'কে রবিবার প্রথমে কল্যাণী হাসপাতাল, পরে  এসএসকেএম হাসপাতালের আইসিসিইউ-এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সদ্যপ্রয়াত অশ্রুকুমার সিকদারকেই সাম্মানিক ডিলিট দেওয়ার কথা উঠেছিল। তাঁর জীবনাবসানের পরে স্থির হয় বীণাপাণিদেবীকে ওই সম্মান 
দেওয়া হবে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক তথা কার্যকরী কমিটির সদস্য সাবলু বর্মণ বলেন, ''বৃহত্তর নমঃশূদ্র সমাজের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন বীণাপাণিদেবী। তিনি একজন সমাজ সংস্কারক। দুই বাংলার মানুষের জন্য তাঁর কাজ রয়েছে। তিনি এক জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নারী। তাই 
তাঁকে ডিলিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।'' উপাচার্য দেবকুমার মুখোপাধ্যায় জানান, ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান। সেখানেই ডিলিট সম্মান দেওয়া হবে।