২৮ বার হেরেও লোকসভায় প্রার্থী হচ্ছেন শ্যামবাবু


জয়-পরাজয়টা তাঁর কাছে কোনও বিষয়ই নয়। একসময় বিবিসি তাঁর নামের সঙ্গে 'ওয়ার্ল্ড বিগেস্ট ইলেকশন লুজার' তকমা জুড়ে দিয়েছিল। ২৮টি নির্বাচনে হারের পর ফের একবার নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন কে শ্যামবাবু সুবুধি। আসলে ভোটে লড়াইটা আদতে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তাঁর। ৮৪ বছরের যুবক শ্যামবাবু এবার লোকসভা নির্বাচনে ওড়িশার গঞ্জাম জেলার দু'টি আসন- আসকা আর বেরহামপুর থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শ্যামবাবু কখনও ভোটে না জিতেও রাজনীতির দুনিয়ায় অতি পরিচিত নাম। বলতে পারেন পরাজয়ের জন্য! ১৯৫৭ থেকে এপর্যন্ত ২৮টি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এরমধ্যে ১০টি বিধানসভা নির্বাচন। কয়েকবার তো জমানত পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। প্রথমবার তরুণ শ্যামবাবু ভোটে লড়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ব্রুন্দাবন নায়েকের বিপরীতে। বিধানসভা ভোট। জিততে পারেননি। "আমি সেবার হিঞ্জিলি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নায়েকের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হয়েছিলাম। কিন্তু হেরে যাই।" এখনও মনে করতে পারেন শ্যামবাবু। তবে লোকসভা ভোটে প্রথম প্রার্থী হন ১৯৬২ সালে। কখনও জেতেননি, তবু কেন বারবার ভোটে প্রার্থী হওয়া? শ্যামবাবু বলছেন, "নির্বাচনে অংশ নেওয়া আমার একমাত্র প্যাশন। জয় বা পরাজয়ের কথা ভুলে আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। আমার আশা, কখনও মানুষ আমাকে তাঁদের প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত করবেন।"

জয়ের আশা নিয়ে যে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হন না, তা তো বটেই। কারণ, ভোটে লড়তে কখনও নিশ্চিত আসন বাছেননি। এমনকী, দুর্বল প্রার্থী বেছে আসন নির্বাচন করেননি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর তালিকায় আছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাও, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়েক এবং জে বি পট্টনায়েক, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামচন্দ্র রথ ও চন্দ্রশেখর সাহু। নিজের হোমিওপ্যাথি ডিসপেনসারিতে রোগী দেখেন। আয়ের একটা বড় অংশ তোলা থাকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য। এরপরেও তাঁর কিছু ভক্ত তাঁকে প্রার্থী হতে চাঁদা দেন। এই লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতেও খরচখরচার জন্য বিভিন্ন জায়গায় পরিচিতদের কাছে যাচ্ছেন। প্রচারেও নেমে পড়েছেন। বাড়ি বাড়ি প্রচারপত্র বিলি করছেন। তবে ভোরবেলা নিজে এলাকায় বেরচ্ছেন ভোটারদের সঙ্গে কথা বলতে। তাঁর লক্ষ্য মূলত প্রাতঃভ্রমণে আসা সব বয়সের মানুষ। শ্যামবাবু বলেন, আমি এর মধ্যেই কেন্দ্রের বেশিরভাগ জায়গা ছুঁয়ে ফেলেছি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য লোকজন টাকাপয়সাও দিচ্ছে।

গত বছর স্ত্রী-বিয়োগ হয়েছে। শ্যামবাবুর দুই পুত্র ও দুই কন্যা। সকলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাড়ির লোক এবার থামতে বলে না? শ্যামবাবু বলছেন, "পরিবারের কেউ কখনও তাঁকে ভোটে লড়াই থেকে বিরত হতে বলেনি। বরং সারা জীবন আমার স্ত্রী আমাকে এই ব্যাপারে উৎসাহিত করেছে। যতদিন শরীর দেবে ভোটে লড়াই করব।"