সরষের মধ্যেই ভূত! ২৫ লক্ষ টাকার জালিয়াতিতে এবার ধৃত ব্যাংককর্মী


এটিএমের কার্ড ক্লোনিংয়ের পর এবার ব্যাংক জালিয়াতির নতুন ও অভিনব পদ্ধতি চেক ক্লোনিং। তাও আবার ভূত বেরিয়ে পড়ল সরষের মধ্যেই। চেক ক্লোনিং করে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এবার গ্রেপ্তার করা হল হুগলির শিয়াখালার ব্যাংককর্মী সুনীত রায়কে। শুক্রবার লালবাজারের গোয়েন্দা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে ওই ব্যাংককর্মী-সহ ৩ জালিয়াতকে গ্রেপ্তার করে রাজ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে। এদিনই আদালতে হাজির করা হলে বিচারক আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত ধৃতদের গোয়েন্দা হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

এটিএম কার্ড ক্লোন করে স্কিমারের মাধ্যমে ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও এই শহর ও শহরতলিতে ঘটেছে এইরকম একাধিক ঘটনা। যেখানে জড়িয়ে পড়েছে রোমানীয় ও নাইজেরীয় ব্যাংক জালিয়াতরাও। দিল্লিতে হানা দিয়েও এই বিদেশিদের গ্রেপ্তার করে কলকাতায় নিয়ে এসেছিলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। এটিএম কার্ড ক্লোনিংয়ের পর এবার চেক ক্লোনিংয়ের ঘটনা দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছেন লালবাজারের ব্যাংক জালিয়াতি দমন শাখার গোয়েন্দারা।

নিজের স্ত্রীর সঙ্গে গুয়াহাটির একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যৌথ অ্যাকাউন্ট রয়েছে অনিল চন্দ্র গোস্বামী নামে এক ব্যক্তির। কয়েকদিন আগে তিনি দেখেন, সেই অ্যাকাউন্ট থেকে কে বা কারা ২৫ লক্ষ ১০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে। এই ঘটনায় অসম পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন অনিলবাবু। অসম পুলিশ তদন্তে নেমে দেখে অনিলবাবুর ওই টাকা উঠেছে শ্যামবাজারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা থেকে। তখনই অসম পুলিশের কর্তারা এই বিষয়ে যোগাযোগ করেন লালবাজারের পুলিশকর্তাদের সঙ্গে। তদন্তে নামেন লালবাজারের গোয়েন্দারাও।

শ্যামবাজারের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ম্যানেজার শোভারানি দেখেন পুরো ঘটনাটাই ঘটেছে হুগলির শিয়াখালার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা থেকে। তখনই তিনি এই বিষয়ে উল্টোডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্ত নেমে গোয়েন্দা পুলিশ দেখে, শিয়াখালার ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাতেই অনিলবাবুর অ্যাকাউন্ট বার বার লগ ইন হয়েছিল। ওই ব্যাংকের কম্পিউটার বিভাগের দায়িত্বে ছিল সুনীত রায় নামে এক কর্মী। ওই ব্যাংকের কর্মী সংখ্যা কম থাকায় তাকেই অ্যাকাউন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই সুনীতই গুয়াহাটির অনিলবাবুর অ্যাকাউন্ট থেকে বার বার চেক ক্লোনিং করে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ২৫ লক্ষ ১০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছিল। সুনীতকে এবিষয়ে সাহায্য করেছিল আরও দুই ব্যাংক জালিয়াত শুভাশিস পাল এবং সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। তদন্ত দেখা গিয়েছে, শুভাশিষের বিরুদ্ধে অসমে একাধিক ব্যাংক জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। সে ছিল ওই রাজ্যের 'মোস্ট ওয়ান্টেড' ব্যাংক জালিয়াত। সুনীতের সূত্র ধরে ওই দুই জালিয়াতকেও গ্রেপ্তার করেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। ধৃতদের জেরা করে হেয়ার স্ট্রিটের একটি ব্যাংক থেকে অনিলবাবুর ১৪ লক্ষ টাকা উদ্ধারও করেন গোয়েন্দারা।