শেষ বেলা পর্যন্ত পাঞ্জা কষা চলল দু’দেশের মধ্যে


অভিনন্দন বর্তমানকে কেন্দ্র করে নিজের দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলের সামনে কে কী ভাবে বার্তা দিতে পারে, তা নিয়ে শেষ বেলা পর্যন্ত পাঞ্জা কষা চলল দু'দেশের সরকারের মধ্যে। ছবি: সংগৃহীত।

দেশের সংসদে ইমরান খানের ঘোষণা মতোই বায়ুসেনার অফিসার অভিনন্দন বর্তমানকে শুক্রবার রাতে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে পাকিস্তান। আর এই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে নিজের দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলের সামনে কে কী ভাবে বার্তা দিতে পারে, তা নিয়ে শেষ বেলা পর্যন্ত পাঞ্জা কষা চলল দু'দেশের সরকারের মধ্যে। 

পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত কাল সে দেশের সংসদে আচমকাই ঘোষণা করেন, তাঁদের হাতে বন্দি ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট অভিনন্দনকে  শুক্রবার ভারতের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এই ঘোষণায় বেশ চাপে পড়ে যায় দিল্লি। আটক বায়ুসেনা অফিসারকে ঢাকঢোল পিটিয়ে দেশে ফিরিয়ে ইমরান গোটা দুনিয়ার সামনে নায়ক হয়ে উঠবেন, এটা কোনও ভাবেই চায়নি নয়াদিল্লি। এই অবস্থায় মোদী সরকার প্রস্তাব দেয়, অভিনন্দনকে দেশে ফেরাতে বায়ুসেনার একটি বিশেষ বিমান পাকিস্তানে যাবে। কিন্তু সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়ে পাকিস্তান জানায়, ওয়াঘা-অটারী সীমান্ত দিয়েই ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে বায়ুসেনার অফিসারকে।

ইসলামাবাদ তাদের প্রস্তাব খারিজ করায় দিল্লি পাল্টা চালে ওয়াঘা-অটারী সীমান্তের জাতীয় পতাকা নামিয়ে আনার 'রিট্রিট সেরিমনি' বাতিল করে দেয়। যাতে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে, পাকিস্তানের দিক থেকে 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' ধ্বনির মধ্যে অভিনন্দনকে ভারতের মাটিতে পা না রাখতে হয়। পাকিস্তান কিন্তু ওই অনুষ্ঠান বাতিল করেনি। প্রথমে ঠিক ছিল, সূর্যাস্তের আগেই অভিনন্দনকে ভারতের হাতে তুলে দেবে পাকিস্তান। কিন্তু অন্তত দু'বার সেই সময় বদল হয়। শেষ পর্যন্ত রাত ন'টা ২১ নাগাদ দেশের মাটিতে পা রাখেন অভিনন্দন।

কেন এই পাঞ্জার লড়াই? কূটনীতিকদের ব্যাখ্যা, মোদী লোকসভা ভোটের আগে পাকিস্তানকে নিয়মিত চোখ রাঙাচ্ছেন। বলছেন, বালাকোটে বায়ুসেনার হামলা নিছক 'পাইলট প্রোজেক্ট' ছিল, এখনও 'আসল'-টা বাকি। সেই আবহে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কিন্তু নিজেকে কার্যত 'শান্তির দূত' হিসেবে তুলে ধরছেন। বলছেন, তাঁর দেশ যুদ্ধ চায় না। তা ছাড়া যুদ্ধ শুরু হলে তাঁর বা মোদীর হাতে লাগাম থাকবে না। বস্তুত, এমন ভূমিকার জন্য শুক্রবার পাকিস্তানের অন্দরমহল থেকে ইমরানকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার দাবিও উঠে গিয়েছে। টুইটারে '#নোবেল পিস প্রাইজ ফর ইমরান' প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে নেট-দুনিয়ায়।   
মোদী সরকারের এখন দাবি, ইমরানের সরকার মুখে বলছে, ভারতের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা কমাতেই তারা অভিনন্দনকে ছেড়ে দিচ্ছে। বাস্তবে ভারতের তৈরি কূটনৈতিক চাপের মুখেই মাথা নত করে ইমরান বায়ুসেনার পাইলটকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। সাউথ ব্লক সূত্রের যুক্তি, ইমরান তথা পাক-প্রশাসন দুনিয়ার সামনে 'শান্তির বার্তা' দিতেই ওয়াঘা-অটারী সীমান্ত দিয়ে অভিনন্দনকে ফেরত পাঠিয়েছে। যাতে প্রচারের ক্যামেরা শুক্রবার সকাল থেকে এই ঘটনার উপর থাকে। ১৯৯৯-তে কারগিল যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের হাতে বন্দি হওয়া বায়ুসেনার পাইলট কে নচিকেতাকে পাকিস্তান ৮ দিন পরে 'ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস'-এর হাতে তুলে দিয়েছিল। তাঁকেও ওয়াঘা সীমান্ত দিয়েই ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।

সাউথ ব্লকের পরিকল্পনা ছিল, ইসলামাবাদ থেকে সরাসরি অভিনন্দনকে দিল্লি উড়িয়ে আনা হবে। তার পরে তাঁর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে তাঁর সঙ্গে বায়ুসেনার শীর্ষকর্তারা কথা বলবেন বা তাঁকে 'ডিব্রিফিং' করা হবে। তার পরেই তাঁকে প্রকাশ্যে আনা হবে। কিন্তু পাকিস্তান সেই প্রস্তাব খারিজ করে অভিনন্দনকে প্রথমে বিমানে লাহৌর নিয়ে আসে। সেখান থেকে ওয়াঘায় এনে ভারতের হাতে অভিনন্দনকে তুলে দেয় তারা।