স্বদেশে ফিরতে রোহিঙ্গাদের ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য চিনের


ঢাকা: রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরাতে তৎপর বাংলাদেশ। মায়ানমারে সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে রাজি হলে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। মাথা পিছু অন্তত ৬ হাজার মার্কিন ডলার সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা করল চিন। বাংলাদেশের উদ্যোগেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে সক্রিয় হয়েছে চিন। বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে গিয়ে প্রত্যেককে বাংলাদেশি মুদ্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চিনা রাষ্ট্রদূত সুন গুঝিয়াং।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের মহাসচিব সায়েদ উল্লাহ জানিয়েছেন, চিন সরকারের এশিয়া বিষয়ক দূত সুন গুঝিয়াং কুতুপালংয়ের শরণার্থী শিবিরে গিয়ে প্রায় ৩০ জন রোহিঙ্গা নারী,পুরুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। এক রোহিঙ্গা নেতার কথায়, 'তিনি আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, মায়ানমারে ফিরে যেতে আমাদের কত অর্থ সাহায্য প্রয়োজন। প্রশ্ন করেছেন, ৫ থেকে ৬ হাজার ডলার দিলে আমরা মায়ানমারে ফিরে যাব কিনা? আমরা জানিয়েছি, আমাদের নাগরিকত্ব দেওয়া না হলে এবং আমাদের দাবিগুলো না মানলে আমরা কোনওভাবেই সেখানে ফিরে যাব না।' রোহিঙ্গাদের সঙ্গে চিনের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন এক বাংলাদেশি কর্মকর্তাও।তিনি বলেন, মায়ানমারে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের জন্য একেক জনকে ৬ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত অর্থ সাহায্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে ঢাকায় অবস্থিত চিনের দূতাবাস এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রকের আধিকারিক দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, তাঁদের তরফে চিনা প্রতিনিধিদল ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। অন্যদিকে, বেজিংয়ের সাবেক বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজের কথায়, 'আন্তর্জাতিক চাপ থেকে মায়ানমারকে রক্ষা করার জন্য রোহিঙ্গাদের ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছিল চিন। শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন চিনা প্রতিনিধিরা। রাখাইনে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে রোহিঙ্গাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশও তৈরি করে দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা।' কিন্তু রোহিঙ্গারা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকলে তা যদি অমীমাংসিত থেকে যায়, তা হলে কোনও রাষ্ট্রই পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে পারবে না।

এর আগে বাংলাদেশের তরফে রোহিঙ্গাদের সাহায্যের জন্য রাখাইনে 'সেফ জোন' তৈরির আবেদন জানানো হয়েছিল। তাতে সাড়া দিয়েছে চিন। সেইমতো এদিন কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন চিনা রাষ্ট্রদূত। তাঁদের ফেরানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। কিন্তু একাধিক রাজনৈতিক জটিলতায় তা খুব মসৃণভাবে এগোচ্ছে না। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্যোগ থাকলেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি এখনও বিশ বাঁও জলে।