‘দেশকে রক্ষার্থে বিয়েটা পিছোতে হবে’, মালার বদলে রাইফেল তুললেন বাংলার জওয়ান


''বিয়েটা এখনই হচ্ছে না। পিছিয়ে দিতে হবে। বিয়ে পরে হলেও অসুবিধা নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে দেশ মাতৃকাকে রক্ষা করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তুমি কি রাজি?'' হবু স্বামীর কথায় সায় দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তরুণী বলেন, "হ্যাঁ, আমি রাজি। তুমি এখন দেশ বাঁচাও।" উৎসাহ পেয়ে বহুদূর থেকে ভেসে আসা কণ্ঠস্বরে তাঁর হবু স্বামীর প্রশ্ন, "হাউ ইজ দ্য জোশ?" সলজ্জ মুখে তরুণী বলেন, "ভেরি হাই।" পড়ে রইল বেনারসি শাড়ি আর গয়না। পড়ে রইল টোপর। রজনীগন্ধার মালার বদলে হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে দেশরক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন হবু বর রাজেশ গোপ। আর ১৮০০ কিলোমিটার দূর থেকেও কনে কৃষ্ণা রইলেন হবু বরের পাশে। যাঁকে জীবনসঙ্গী করতে চলেছেন, তাঁর জন্য গর্বিত কনে।

পুরুলিয়া জেলার পুঞ্চা এলাকার মউলাডাঙা গ্রামের বাসিন্দা রাজেশ গোপ সাধারণ কৃষক পরিবারের ছেলে। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন মিলিটারি হবেন। পরীক্ষা দিয়ে পাস করে সেনাবাহিনীর জওয়ার হিসাবে চাকরি পান গত বছর। প্রথম পোস্টিং পাঠানকোটে। চাকরি পাওয়ার পরপরই পাশের লৌলারা গ্রামের কৃষ্ণা গোপের সঙ্গে বিয়ের সম্বন্ধ আনে পরিবার। কৃষ্ণা তাঁর এলাকার একটি কলেজে ভূগোল অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। পরিবারের সম্মতিতেই দু'জনের মধ্যে পরিচয় হয়। এক বছর ধরে আলোচনার পর ১২ মার্চ বিয়ের দিন ঠিক হয়। দু'পক্ষই খুশি। শুরু হয় বিয়ের কেনাকাটা। তৈরি কনের শাড়ি, গয়না। বরের ধুতি, পাঞ্জাবি। বিয়ে ও বউভাতের মেনু নিয়েও আলোচনা শেষ। সেনা জওয়ান রাজেশের ছুটির আবেদনের মঞ্জুর। ১০ মার্চ কলকাতায় এসে পৌঁছনোর কথা ছিল তাঁর। কলকাতা থেকে সোজা পুরুলিয়া ও তার দিন দু'য়েক পরই বিয়ের পিঁড়িতে বসার পরিকল্পনা ছিল ওই সেনা জওয়ানের।

কিন্তু তার পরই ঘটল কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের উপর জঙ্গি হামলা। তার প্রত্যাঘাতে ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ারস্ট্রাইক। এই অবস্থায় পাঠানকোটে ডিউটিতে থাকা সেনাদের ছুটি বাতিল হয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী, ছুটি বাতিল হয়েছিল রাজেশেরও। কিন্তু সামনেই যে বিয়ে। কিন্তু রাজেশ অনড়। তিনি প্রথম ফোনটি করেন বাড়িতে। জানান, বিয়ে করতে পারছেন না। পরের ফোনটি করেন হবু শ্বশুরবাড়িতে। সরাসরি জানান, বিয়ে পিছিয়ে দিতে হবে। এখন বিয়ের পিঁড়ির থেকে দেশ মাকে রক্ষা করা ও বাঁচানো অনেক বেশি প্রয়োজন। তাই তাঁকে ডিউটি করে যেতে হবে। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা প্রথমে একটু ঘাবড়ে যান। ভাবী স্ত্রী কৃষ্ণার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন রাজেশ। সেনা জওয়ান রাজেশের পাশে দাঁড়ান কৃষ্ণা। রাজেশকে তিনি বলেছেন, মন দিয়ে ডিউটি করে দেশরক্ষা করতে। বিয়েটা না হয় পরেই হবে। কৃষ্ণার দাদা তীর্থঙ্কর গোপ জানান, তাঁর বোনের বিয়ের প্রস্তুতি শেষ। বাড়িতেই ম্যারাপ বেঁধে বিয়ের অনুষ্ঠান হত। সেই আয়োজনও শেষ। অনেক আত্মীয় স্বজনকে নিমন্ত্রণও করে ফেলেছেন। কিন্তু দেশকে রক্ষার জন্য তাঁদের বাড়ির হবু জামাই যে কাজ করছে, তাতে তাঁরা গর্বিত। তাঁর বোনও এতে সায় দিয়েছেন। আত্মীয়রাও বিষয়টি বুঝতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ছেলেকে নিয়ে গর্ববোধ করছেন রাজেশ গোপের পরিবারও।