নওশেরার ‘শের’-র জন্যই কাশ্মীর আজও ভারতের


অভিনন্দনকে ছেড়ে দিয়ে 'শান্তির' বার্তা দিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু কাশ্মীর নিয়ে তাদের টানা হ্যাঁচরা থেমে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। ৭০ বছর আগে যার সূচনা হয়েছিল। কিন্তু এই যে এখনও কাশ্মীরে ভারতীয়রা ঘুরতে যায়, শ্রীনগরে মনের আনন্দে প্রকৃতির শোভা দেখে। সে আনন্দ পেতে ভিসার ঝক্কি পোহাতে হতো। পুরো কাশ্মীরটাই চলে যেতে পারত জিন্নার দেশে। বহু ভারতীয় সেনা ১৯৪৭ সালের পাক আক্রমণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ভারতভূমিকে রক্ষার স্বার্থে আত্মবলিদান দিয়েছে বহু সেনা জাওয়ান। তবু কাশ্মীর রক্ষায় কোথাও যেন আলাদা ভাবে নাম চলে আসে বীর ভারতীয় জওয়ান মহম্মদ ওসমানের।

কাশ্মীরের রাজা হরি সিং তখনও দিবা স্বপ্ন দেখছেন দুই স্বাধীন রাষ্ট্রের মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি এক স্বাধীন রাজ্যের রাজা হয়ে থাকবেন। ২২ অক্টোবর ১৯৪৭, পশ্চিম সীমান্ত পার করে কাশ্মীরে ঢুকে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। প্রাথমিকভাবে নিজের সেনা দিয়ে রোখার চেষ্টা করেছিলেন রাজা। কিন্তু পাক হানাদারদের ঠেকানো তাঁর ক্ষমতার বাইরে ছিল। শ্রীনগর প্রায় হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। ভয়ে রাজা ভারতের সাহায্যের পাণিপ্রার্থী হলেন। পাক হানা ঠেকাতে সমরে নামে ভারতীয় স্থল সেনা ও বায়ু সেনা।

যেদিক দিক দিয়ে পারছে কাশ্মীর দখলের চেষ্টা করছে পাকিস্তান। সমরে নামলেন মহম্মদ ওসমান। তিনি 'নৌসেরার সিংহ'। এলাকায় একটাই সিংহ থাকতে পারে, এমনই মনোভাব নিয়ে নৌসেরার কাছে ভারতীয় সেনার এগিয়ে এল। 'নেতৃত্বে' সেনা নায়ক মহম্মদ ওসমান। বিশেষ নির্দেশ পেয়ে ভয়াবহ হানাদারদের রুখতে কাশ্মীরের মাটিতে প্রবেশ করলেন তিনি। ঝাঙর তাঁর সামরিক স্ট্রাটেজিক কেন্দ্র।

সেখানেই আটকে দিলেন পাক হানাদারদের। বালুচ রেজিমেন্টের সাহায্যে হানা দিয়েছিল পাকিস্তানি উপজাতি বাহিনী। কিন্তু সেই বাহিণীর প্রতিটি মুভমেন্ট ছিল ওসমানের নখদর্পনে। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ওই বালুচ রেজিমেন্টের সর্বাধিক পরিচিত ক্যাপ্টেন ছিলেন ওসমান। সোজা প্রশ্ন পত্রের সমাধান করতে অসুবিধা হয়নি সেনা নায়ক ওসমানের।

নৌসেরার ঝাঙর থেকে পাক অগ্রবর্তী হানাদার বাহিনীকে রুখতে অদম্য লড়াই করেছিলেন ওসমান ও তাঁর অধীনস্থ সেনাবাহিনী। আটকে গিয়েছিল হানাদাররা। ঝাঙরের প্রবল লড়াই ভারতীয় সেনাকে শ্রীনগরে প্রবেশ করার অনেক সময় দিয়েছিল। এক্ষেত্রে বায়ু সেনার ভূমিকাও অনস্বীকার্য। গবেষকদের মতে, ঝাঙরে যদি হানাদারদের ঠেকিয়ে না রাখা যেত তাহলে ভারতের মানচিত্র অন্যরকম হত।

দেশ ভাগের পর ওসমান ভারতীয় নাগরিকত্ব নেন। তাঁকে ডোগরা রেজিমেন্টে পাঠানো হয়। নতুন রেজিমেন্টেও স্বমহিমায় বিরাজ করতেন তিনি। ১৯৪৮ সালে পাক যুদ্ধের সময়েই শহীদ হন 'শের' ওসমান।