সেদিন আকাশপথে কীভাবে পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করেছেন, জানুন বীর কম্যান্ডার অভিনন্দনের কাহিনি


স্বাগত বীর উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন।
'একজন ভালো যুদ্ধবিমানের চালক হতে গেলে কী লাগে?'

'খারাপ মনোভাব...' এক টেলিভিশন তথ্যচিত্রে এটা বলেই সকলকে হতবাক করে দিয়েছিলেন কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। এখন যে মানুষটির নাম দেশের মুখে মুখে ঘুরছে।

দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা দেখিয়ে পাকিস্তানের টার্গেটে থাকা ভারতীয় সেনার ঘাঁটিগুলিতে আঘাত আটকে দিতে পেরেছেন অভিনন্দন। ভারতে যাতে পাকিস্তান আকাশপথে হামলা না করতে পারে, সেজন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান তাড়া করে পাক অধীকৃত কাশ্মীরে চলে গিয়েছেন অভিনন্দন।

বুধবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট নাগাদ সীমান্তে উচ্চ সতর্কতা জারি হয়। পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকতে পারে বলে আগাম আঁচ করা হয়েছিল। রাডারে তা ধরাও পড়ে। এরপরে সকাল ১০টা নাগাদ পাকিস্তানি বায়ুসেনার তিনটি এফ-১৬ বিমান ভারতীয় সীমানায় নৌশেরা সেক্টরে ঢুকে পড়ে ও বোমা ফেলে।

সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক বায়ুসেনা পাল্টা প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে ময়দানে নেমে পড়ে। মিগ-২১ বাইসন নিয়ে তৈরি অভিনন্দন জানান তিনি তৈরি। তারপরই মিগ-২১ বাইসন নিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। মিগ বাইসন একটু পুরনো বিমান, অন্যদিকে এফ-১৬ অ্যাডভান্সড। ফলে লড়াই সহজ ছিল না। তা সত্ত্বেও বীর বিক্রমে লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়েন অভিনন্দন।

পাকিস্তানের টার্গেট ছিল সেনা ঘাঁটি ও সদর দফতরে হামলা চালানো। তার পাল্টা ভারত দুটি মিগ-২১ ও একটি সুখোই ৩০ এমকেআই নামায়। অভিনন্দন যে মিগ-২১ চালাচ্ছিলেন তা যথাসময়ে পৌঁছে এই-১৬ বিমানের আক্রমণ রুখে দেয়।

পাকিস্তানি এফ-১৬-র পিছনে পড়ে ছিলেন অভিনন্দন। এছাড়া চারটে মিরাজ ৩ বিমান ও চারটে চিনে তৈরি জেএফ-১৭ থান্ডার ফাইটারও পাকিস্তান উড়িয়ে এনেছিল এফ-১৬ কে রক্ষা করে ফেরত নিয়ে যেতে।

মাঝ আকাশে তখন তুমুল লড়াই চলছে। ভারতের অন্য বিমান তখন অভিনন্দনকে সতর্ক করেছিল, তবে এফ-১৬কে কব্জা করে নিয়েছিলেন অভিনন্দন। আর-৭৩ এয়ার টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রও ছোঁড়েন। যার ফলে পাকিস্তানি এফ-১৬ আছড়ে পড়ে মাটিতে। তবে একইসঙ্গে অভিনন্দনের বিমানের ডানায় ধাক্কা লাগে। যার ফলে তাঁকে বাধ্য হয়ে নামতে হয় ও তিনি গিয়ে পড়েন পাক অধীকৃত কাশ্মীর অংশে। সেখানেই পাক সেনা তাঁকে হেফাজতে নেয়।

পাকিস্তান একেবারে মনস্থির করে ভারতীয় সেনার ঘাঁটিতে আক্রমণ করবে বলে এসেছিল। তবে বীর কম্যান্ডার অভিনন্দনের উপস্থিতি ও ভারতীয় বায়ুসেনার কারণে পাকিস্তান তাঁদের লক্ষ্যে সফল হয়নি। এমনকী পাকিস্তানি সেনার হাতে ধরা পড়ার আগেও চূড়ান্ত বিক্রম দেখিয়ে গিয়েছেন অভিনন্দন। আকাশে ফায়ার করেছেন, জরুরি কাগজ যাতে পাকিস্তানের হাতে না যায় তাই সেটা গিলে ফেলেছেন।

এই সবই তিনি করেছেন যখন শরীর ছড়ে গিয়েছে। রক্ত ঝরছে। পাক অধীকৃত কাশ্মীরের স্থানীয়রা তাকে ঘিরে ফেলে হামলা চালিয়েছে। সেখানে উপায় না দেখে একটি পুকুরে ঝাঁপ মারেন অভিনন্দন। সেখানে সাঁতার কাটতে কাটতে কিছু কাগজ গিলে ফেলেন, কিছু কাগজ ধুয়ে তথ্য লোপাট করে দেন। যাতে তা পাকিস্তানের হাতে না পৌঁছয়।

অভিনন্দনের বায়ুসেনায় ১৬ বছরের অভিজ্ঞতা। তিনি চেন্নাইয়ের বাসিন্দা। তাঁর পিতাও বায়ুসেনার পাইলট ছিলেন। তাঁর নাম এয়ার মার্শাল সিমহাকুট্টি বর্তমান। ২০০০ সালে এনডিএ (ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি) যোগ দেন অভিনন্দন। তার আগে কোয়েম্বাটুরের অমরাবতী নগরের সৈনিক ওয়েলফেয়ার স্কুলে অভিনন্দন পড়াশোনা করেছেন। ২০০৪ সালে পাইলট হন। মিগ ২১ বিমান চালানোর আগে তিনি সুখোই ৩০ এমকেআই বিমানের পাইলট ছিলেন তিনি।
 
সবসময় বাবাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন অভিনন্দন। ১৯৭৩ সালে সিমহাকুট্টি বায়ুসেনায় যোগ দেন। প্রায় ৪ হাজার ঘণ্টা বিমান উড়িয়েছেন সিমহাকুট্টি। ২০০১ সালে সংসদে হামলার পর অপারেশন পরাক্রমের সময় বিশেষ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। অভিনন্দনের মা পেশায় চিকিৎসক। সারা বিশ্ব ঘুরে তিনি বিধ্বস্ত এলাকায় গিয়ে চিকিৎসা করেন। অভিনন্দনের স্ত্রী তনভী মারওয়া-ও নিজের বায়ুসেনায় কাজ করে বীরত্বের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন।

২০১১ সালে অভিনন্দনকে একটি টেলিভিশন তথ্যচিত্রে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল - সুখোই ৩০ বিমানের চালক হতে গেলে কী প্রয়োজন? হেসে তিনি জবাব দেন - 'খারাপ মনোভাব। যা আমাদের নিজেদের কাজে পারদর্শী করে তোলে।'

আর সেজন্যই বোধহয় অভিনন্দনের সহকর্মীরা তাঁকে সিঙ্ঘম (সিংহ) বলে ডাকেন। আর সত্যিই তিনি সিংহই বটে।

ফের একবার ভারতে সুরক্ষিত ফিরে আসার জন্য স্বাগত অভিনন্দন। আপনি যথার্থ অর্থেই ভারতের নায়ক।