জোট চাই না, দাবি এ বার কংগ্রেসেই


প্রথম দফার ভোটের মনোনয়ন শুরু হতে ৪৮ ঘণ্টা বাকি। এই অবস্থায় জট আরও পাকিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের বড় অংশ দাবি তুলল, 'সম্মান' বিসর্জন দিয়ে তারা বামেদের সঙ্গে জোট চায় না! জোট এবং জটের বল প্রদেশ কংগ্রেস আবার ফেরত পাঠাল দিল্লির কোর্টে।

রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ আসন নিয়ে জট কাটিয়ে বামেদের সঙ্গে সমঝোতার বল গড়িয়ে দিয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীই। কিন্তু এখন আবার বিস্তর গিঁট পাকিয়ে রায়গঞ্জ-সহ রাজ্যের ৪২টি আসনেই লড়তে চাইছেন বঙ্গ কংগ্রেসের সিংহভাগ নেতা! সিপিএমকে আক্রমণ করতেও শুরু করে দিয়েছেন তাঁদের অনেকে। বিজেপির বাড়বৃদ্ধি ঠেকানোর লক্ষ্যে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সঙ্গে শুক্রবার রাত দেড়টা পর্যন্ত বৈঠক করে ১৩-১৪টি আসনে রফার সূত্র বার করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। কিন্তু শনিবার দীপা দাশমুল্সি, আব্দুল মান্নান, শঙ্কর মালাকার, শুভঙ্কর সরকার, সর্দার আমজাদ আলিদের সম্মিলিত জোট-বিরোধী সওয়ালের মুখে 'অসহায়' সোমেনবাবু সিদ্ধান্তের ভার এআইসিসি-র উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। কংগ্রেসের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে সূর্যবাবুও রাতের ট্রেন ধরে রায়গঞ্জ চলে গিয়েছেন বামফ্রন্টের নির্বাচনী সভার জন্য।

বিধান ভবনে এ দিন সন্ধ্যায় প্রদেশ কংগ্রেসের নির্বাচন কমিটির বৈঠকে অধিকাংশ নেতা-নেত্রীই দাবি তুলেছেন, তাঁরা আরও বেশি সংখ্যায় আসন চান, আরও 'পছন্দের আসন' চান। প্রদেশ সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য ও দক্ষিণ মালদহের সাংসদ আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী অবশ্য বৈঠকে জোটের পক্ষে সওয়াল করেও মধ্যপন্থা নিয়েছেন। ডালুবাবু বৈঠকে বলেছেন, 'সম্মান' নষ্ট করে কিছুই করা উচিত নয়। তবে সব আসনে লড়ার ক্ষমতা যে কংগ্রেসের নেই, তা মাথায় রেখেই কিছু আসন বেছে নিলে ভাল। আর বৈঠক থেকে বেরিয়ে তাঁর মন্তব্য, ''জোটের দিকে তাকিয়ে আছি। তবে সেটা পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হওয়া উচিত।''

জোট-বিরোধিতার সুরে এ দিন সব চেয়ে সরব ছিলেন দীপাই। রাহুলের নির্দেশেই যে রায়গঞ্জে লড়াই করার দাবি থেকে সরে আসতে হয়েছে, তা জানিয়েও তিনি বলেন, প্রার্থী দিলে কংগ্রেস ওই আসন বার করতে পারবে বলেই তিনি মনে করেন। বৈঠকে রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ সিপিএমকে সরাসরি 'বিশ্বাসঘাতক দল' বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর সওয়াল, তৃণমূলের সঙ্গে ১০ বছর আগে জোট করে কলকাতার দু'শো কিলোমিটারের মধ্যে কংগ্রেস কোনও আসন পায়নি। দক্ষিণবঙ্গে দল কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল। আর এখন সিপিএমের সঙ্গে জোট করতে গিয়ে কংগ্রেস উত্তরবঙ্গে আসন পাচ্ছে না। শুধু মালদহ, মুর্শিদাবাদ নিয়ে থাকতে হলে কংগ্রেসের আর অন্য কাউকে দরকার কি? বৈঠকে না থাকলেও মান্নানকে ফোনে ধরেন দীপা। বিরোধী দলনেতা মান্নানও তীব্র আক্রমণ করেন সিপিএমকে। অধীর চৌধুরী অবশ্য বৈঠকে আসবেন না বলে জানিয়েছিলেন।

বৈঠকের পরে সোমেনবাবু বলেন, ''দিল্লিকে জানিয়েছি। দু-এক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। এ ভাবে তো চলতে পারে না!''