মারধর করে ‘ঝুলিয়ে দেওয়ায়’ ভেন্টিলেশনে বধূ, ধৃত স্বামী

কেয়া রায়।

এক তরুণীকে বেধড়ক মারধরের পরে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ২৯ বছরের ওই তরুণী হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করেছে। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বালির নিশ্চিন্দায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, ন'বছর আগে বেলঘরিয়ার বাসিন্দা, পেশায় চটকলের কর্মী কার্তিক দে-র মেয়ে কেয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় বালির নিশ্চিন্দা কুমিল্লাপাড়ার বাসিন্দা অনিমেষ রায়ের। ওই যুবক উত্তরপ্রদেশের বন দফতরের কর্মী। অভিযোগ, বিয়ের পরেই কেয়াকে নিয়ে মথুরায় চলে যায় অনিমেষ। সেখানে গিয়েই শুরু হয় অশান্তি। গত জানুয়ারিতে পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে কেয়া জানান, অনিমেষ অত্যধিক নেশা করে। মথুরায় গিয়ে তারই প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। তাতেই শুরু হয়েছিল অত্যাচার। অভিযোগ, কেয়া তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন তাঁর পেটে লাথি মেরেছিল অনিমেষ। যার জেরে গর্ভপাত হয়ে যায় তাঁর। তখন কেয়াকে কলকাতায় নিয়ে চলে আসেন কার্তিকবাবু।

কার্তিকবাবু জানান, ওই ঘটনার কয়েক মাস পরেই ভুল স্বীকার করে ফের কেয়াকে মথুরায় নিয়ে যায় অনিমেষ। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর অশান্তি তার পরেও থামেনি। ওই দম্পতির সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ২০১৬ সালে কেয়া তাঁর ছেলেকে নিয়ে পাকাপাকি ভাবে বালির শ্বশুরবাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু সেখানেও অনিমেষের মা, কাকা ও কাকিমা তাঁর উপরে মানসিক অত্যাচার শুরু করে বলে অভিযোগ। এমনকি, ছুটিতে বাড়ি এলেই অনিমেষ কেয়াকে মারধর করত বলেও অভিযোগ।

গত জানুয়ারিতে ফের বাড়ি আসে অনিমেষ। অভিযোগ, ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি কেয়াকে বেধড়ক মারধর করে ওই যুবক। সেই সময়ে নিশ্চিন্দা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন কেয়া। বৃহস্পতিবার কার্তিকবাবু বলেন, ''বুধবার রাতে ফোন করে জামাই জানায়, কেয়া গলায় দড়ি দিয়েছে। ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে খবর পেয়ে ওই রাতেই আমি বালিতে আসি। কিন্তু সেই সময়ে অনিমেষদের বাড়িতে তালা ঝুলছিল।'' তিনি জানান, এর পরে জামাইয়ের থেকে জেনে তাঁরা হাওড়ার আন্দুল রোডের ওই হাসপাতালে যান।

এ দিন কার্তিকবাবু বলেন, ''ওরা সকলে মিলে কেয়াকে মারধর করে ঝুলিয়ে দিয়েছিল।'' ঘটনার পরে বিষয়টি মৌখিক ভাবে জানতে পেরেই বৃহস্পতিবার সকালে অনিমেষকে আটক করে নিশ্চিন্দা থানার পুলিশ। ওই যুবকের দাবি, ''ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। কেয়ার কারও সঙ্গে বনিবনা হত না। তা নিয়েই অশান্তি হত।'' বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই গৃহবধূর বাবা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরেই অনিমেষকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার পর থেকে পলাতক ওই যুবকের মা, কাকা ও কাকিমা। তাদেরও পুলিশ খুঁজছে।