জঙ্গি তালিকায় উঠলেও মাসুদ শাস্তি পেত কি?


জইশ-ই-মহম্মদের নেতা মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি তালিকাভুক্ত করে লোকসভা ভোটে যেতে পারলে অবশ্যই লাভ হত নরেন্দ্র মোদীর। আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রশ্নেও শক্তিশালী বার্তা দেওয়া যেত। কিন্তু মাসুদ আজহারকে সবক শেখানোর যে দাবি তোলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত হলেই তা হতো কি? অতীতের দৃষ্টান্ত তুলে কূটনীতিকরা বলছেন, লাভ বিশেষ হত না।

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ তালিকায় কোনও জঙ্গি অন্তর্ভুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে আইনের শাসন বলবত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দেশের বিচার বিভাগের। অতীতে দেখা গিয়েছে, তালিকাভুক্ত হলেও পাকিস্তানের আদালত এমন ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিয়ে নির্বিঘ্নে নাশকতা চালিয়ে যেতে দিয়েছে। কিছু দিনের জন্য লোক দেখানো গ্রেফতার করে মাসুদকে গৃহবন্দি রাখা হতো, পরে 'সাজানো' বিচারে তাকে ছেড়ে দেওয়াই হতো। উদাহরণ লস্কর নেতা হাফিজ সইদ।

কূটনীতিকরা বলছেন, দু'দশকে প্রায় দু'ডজন জঙ্গি-বিরোধী প্রস্তাব পাশ হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে। কিন্তু পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদীদের স্বর্গোদ্যানে এক চিলতে মেঘও ঘনায়নি। 'আল কায়দা এবং তালিবান নিষিদ্ধ কমিটি' গঠন করা হয়েছে এই সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়িত করার জন্য। প্রত্যেক বছর তারা জঙ্গি তালিকার পুনর্বিন্যাসও করেছে। শেষ পর্যন্ত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ২৬২ জন জঙ্গি এবং ৮২টি সংগঠনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। এদের অন্তত ১০০ জনই পাকিস্তানের।
 দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ 
এই তালিকায় রয়েছে করাচির ঠিকানাধারী দাউদ ইব্রাহিমও। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনও পদক্ষেপই করা হবে না বলে সূত্রের খবর। মুম্বই হামলার পর ২০০৮ থেকে তালিকায় রয়েছে হাফিজ সইদ। জইশ-ই-মহম্মদ এবং জামাত-উদ-দাওয়া নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে ওই একই সময় থেকে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব— সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের দায়িত্ব এই সংগঠন এবং ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, তাদের অন্য রাষ্ট্রে পালানোর পথ বন্ধ করা। সে জন্য সংশ্লিষ্ট দেশকে আইন পাশ করাতে হয়। কিন্তু হাফিজ সইদের সময় থেকেই পাকিস্তানের আইন বাঁচিয়ে আসছে জঙ্গিদের। হাফিজকে তালিকাভুক্ত করার পর তাকে এবং আরও ১২৫ জনকে সতর্কতামূলক কারণে আটক করে তিন মাস গৃহবন্দি রাখা হয়। পরে লাহৌর হাইকোর্ট  হাফিজকে মুক্তি দেয়। 

মনে করা হচ্ছে, মাসুদ আজহারকে কাল রাতে তালিকাভুক্ত করতে পারলেও অন্য কিছু ঘটত না। বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রশ্ন উঠেছে। প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পুত্র তথা পিপিপি-র চেয়ারম্যান বিলাবল ভুট্টো জারদারি আজ বলেন, ''তিন বারের ভোটে জেতা প্রধানমন্ত্রী আজ জেলে। কিন্তু নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলি নাশকতা চালাচ্ছে দেশে-বিদেশে।''