অন্তঃসত্ত্বারাও অনশনে! সপ্তমদিনে হবু শিক্ষকদের অনশন


অন্তঃসত্ত্বা মহিলারাও অনশনে! বুধবার ধর্মতলায় এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের অনশন সপ্তমদিনে পড়ল। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন প্রায় ৫০ জন। পর্যাপ্ত শূন্য শিক্ষকপদ থাকলেও 'ওয়েটিং লিস্ট থেকে' নিয়োগ হচ্ছে না, এই অভিযোগে অনশন করছেন কয়েকশো প্রার্থী। এসএসসির লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেছেন অথচ কাউন্সেলিংয়ে ডাক পাননি এমন দু'জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা এদিন অনশনে বসেন। সদ্যোজাত কোলে তিনজন মা-ও অনশন শুরু করেন। তাঁদের বুঝিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।


উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছিল ২০১৬ সালে। যাঁরা পরীক্ষায় পাস করেছেন তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু নিয়োগের তালিকায় প্রার্থীদের নম্বর উল্লেখ করা হচ্ছে না। এখানেই সন্দেহ দানা বেঁধেছে। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, অনৈতিক উপায়ে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। কেউ জানতেই পারছে না যাঁদের চাকরি হচ্ছে তাঁরা কত নম্বর পেয়েছেন। প্রসঙ্গত, যে কোনও মেধা তালিকায় প্রকাশিত নামের পাশে নম্বর উল্লেখ করাই নিয়ম। এসএসসি কতৃর্পক্ষ তা করছে না। তা নিয়েই ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। এদিন যে দু'জন অন্তঃসত্ত্বা এসেছিলেন তাঁদের অভিযোগ, নিয়োগে দুর্নীতি হচ্ছে। প্রতিবাদ করতে তাঁরা অনশনে বসতে চান। আন্দোলনকারীরা তাঁদের বোঝান, অনশনে বসলে আগত সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। সবার অনুরোধে তাঁরা বাড়ি ফেরেন। একইভাবে সদ্যোজাত কোলে নিয়ে অনশনে বসা তিনজন মাকে বাড়ি পাঠানো হয়।


সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম অনশনকারীদের সঙ্গে দেখা করেন। হাই কোটের্র আইনজীবীরাও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। হাই কোর্টে এই বিষয়ে জনস্বার্থ মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। হবু শিক্ষকদের আন্দোলনে সহমর্মিতা জানিয়েছেন সবাই। কংগ্রেস বিধায়ক ফিরোজা বেগম অনশন মঞ্চে এসে বলেন, "ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। রাজ্য সরকারের উচিত মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টি দেখা। যাঁরা পরীক্ষায় পাস করে চাকরির দাবিতে অনশনে বসেছেন তাঁরা কেউ অপরাধী নন। কিন্তু সবার সঙ্গে অপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছে।" কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় অনশন মঞ্চে এসে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "ন্যায্য দাবিতে সাতদিন ধরে অনশন চলছে। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। রোদ এবং বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আন্দোলনকারীরা মাথার উপর পলিথিন টাঙিয়েছিলেন। পুলিশ তা খুলে দিয়েছে।" আশুতোষের উদ্যোগে কিছু পানীয়জলের বোতল অনশন মঞ্চে রাখা হয়। বামপন্থী শিক্ষক নেতা স্বপন মণ্ডল রাজ্য সরকারের নিন্দা করেন। তাঁর বক্তব্য, এসএসসির অদ্ভুত নিয়োগ নীতির কারণেই চাকরি প্রার্থীরা অনশনে বসেছেন। হবু শিক্ষকদের অনশন ইস্যুতে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের উপর প্রবল চাপ তৈরি করেছেন বিরোধীরা।

ধর্মতলায় অনশন ছাড়াও সল্টলেকে উন্নয়ন ভবনের পাশে ছয়দিন ধরে অবস্থান করছেন কয়েক হাজার এসএসকে এবং এএমএসকের শিক্ষক-অশিক্ষক। জট কাটাতে মঙ্গলবার বিকাশ ভবনে দফায় দফায় বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সমাধানসূত্র আসেনি। বিষয়গুলি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পাশে থাকার কথা ঘোষণা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র প্রমুখ।