৩৭০০ কিমি পেরিয়ে পৌঁছল কলকাতা এসে পৌঁছল এসি মেট্রোর নয়া রেক

আগমন: জাহাজ থেকে নামানো হচ্ছে মেট্রোর নয়া রেক। সোমবার, কলকাতা বন্দরে। 

অবশেষে চিনের ডালিয়ান থেকে জাহাজে কলকাতা এসে পৌঁছল এসি মেট্রোর রেক।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ডালিয়ান থেকে রওনা দিয়েছিল হংকংয়ের জাহাজ এমভি হান ঝ্যাং। সাংহাই-সিঙ্গাপুর-চট্টগ্রাম হয়ে ২৭ দিনে ৩,৬৩৮ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতা বন্দরে নোঙর ফেলেছে সেটি।
শুক্রবার রাতেই কলকাতা বন্দর থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার দূরে হুগলি নদীর মোহনায় স্যান্ডহেডে পৌঁছে গিয়েছিল ৭,৫২০ টন ওজনের ওই জাহাজটি। কিন্তু ১০৭.৪২ মিটার লম্বা এবং ১৯ মিটার চওড়া জাহাজটির নোঙর করার জন্য প্রয়োজনীয় চার মিটার নাব্যতা না মেলায় তাকে শুক্র এবং শনিবার স্যান্ডহেডেই অপেক্ষা করতে হয়। রবিবার সকালে রওনা হয়ে সন্ধ্যায় সেটি কলকাতা বন্দরে নোঙর করে।

প্রায় ১২ হাজার বর্গফুটের ধাতব পাত দিয়ে ঢেকে রাখা 'হ্যাচ কভারের' নীচে জাহাজের পেটের মধ্যে এসে পৌঁছেছে মেট্রোর আটটি কোচ এবং যন্ত্রাংশ মিলিয়ে মোট ৫০টি বাক্স। প্রথমে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে বিশাল ছাদের আকারের হ্যাচ কভার সরান জাহাজের কর্মীরা। এর পরে শুরু হয় পণ্য খালাস করার প্রক্রিয়া। প্রথমেই যন্ত্রাংশের ৪২টি বাক্স জাহাজ থেকে নামিয়ে আনা হয়। মাঝরাতে শুরু হয় কোচ নামানোর কাজ। ওই জাহাজটির বাঁ দিকে ২০০ টনের দু'টি ক্রেন রয়েছে। এক পাশে থাকা ওই ক্রেন ব্যবহারের আগে জাহাজের ভারসাম্য ঠিক রাখতে উল্টো দিকে থাকা ব্যালাস্টে (প্রকোষ্ঠ) জল ভর্তি করা হয়। পরে পণ্য ওঠা-নামার সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ওই জল বার করা হয়।
রবিবার রাত ১২টার কিছু আগে জাহাজ থেকে ট্রেলারে নামানো হয় প্রথম রেকটি। প্রতিটি রেককে জাহাজ থেকে ট্রেলারে নামাতে গড়ে ২ ঘণ্টা করে সময় লেগেছে বলে খবর। সোমবার দুপুরের দিকে শেষ হয় রেক নামানোর কাজ। 
ট্রেলারে করে সেগুলিকে এ দিনই বন্দর সংলগ্ন রেললাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে আটটি কোচকে একে একে লাইনে নামিয়ে নিউম্যাটিক ব্রেক (হাওয়া নিয়ন্ত্রিত ব্রেক) খুলে দিয়ে কাপলিংয়ের মাধ্যমে একটির সঙ্গে অন্যটি জুড়ে দেওয়া হবে। ডিজেল চালিত দু'টি শান্টিং লোকো ইঞ্জিন আগেই বন্দরে অপেক্ষায় রয়েছে। মেট্রোর আটটি কোচকে পরপর জুড়ে সামনে এবং পিছনে একটি করে ডিজেল ইঞ্জিন জোড়া হবে। ওই ট্রেনটিকে মাঝেরহাট, নিউ আলিপুর, চিৎপুর, শিয়ালদহ, দমদম হয়ে নিয়ে যাওয়া হবে নোয়াপাড়ায় মেট্রোর ইয়ার্ডে।

কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার এ দিন জানান, বছর আটেক আগে চিনের ডালিয়ান সংস্থা থেকেই দিল্লি মেট্রোর জন্য রেক এসেছিল। ওই রেক সে বার কলকাতা থেকে সড়কপথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দিল্লি। চেয়ারম্যান বলেন, ''পুরো প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে শেষ করতে কলকাতা বন্দর এবং মেট্রো কর্তৃপক্ষ একযোগে কাজের তদারক করছেন।''মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নতুন রেকটি পরীক্ষার পরে ইতিবাচক ফলাফল মিললে মে মাস থেকে প্রতি মাসে চিন থেকে একটি করে রেক আসবে। মোট ১৪টি রেক আসার কথা। তিনি আরও জানান, মাস তিনেকের মধ্যে নতুন রেকটিকে যাত্রী পরিবহণের কাজে নামানোর চেষ্টা চলছে।মেট্রো সূত্রের খবর, নতুন রেকগুলি এ যাবৎকালের মেট্রোর রেকের তুলনায় অনেকটাই উন্নত। সেগুলির মধ্যে চারটি মোটর কোচের এক-একটির ওজন প্রায় ৪২ টন। দু'টি ড্রাইভার-টেলর কোচের প্রতিটির ওজন ৪০ টন, দু'টি টেলর কোচের প্রতিটি ৩৯ টন। 
মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, বাতানুকূল এবং সিসি ক্যামেরা-সহ আধুনিক মানের আটটি কোচের ট্রেন এক বারে প্রায় তিন হাজার যাত্রী বহন করতে পারবে।