মাসুদ আজহার জীবিতই! সরানো হল হাসপাতাল থেকে, জঙ্গি নেতাকে ঘিরে নয়া জল্পনা

৪ মার্চ , ২০১৯, ১২:১২:৩৩
 
মাসুদ আজহারকে রাওয়ালপিণ্ডির হাসপাতাল থেকে সরানো হয়েছে, খবর গোয়েন্দা সূত্রে।

মাসুদ আজহার জীবিত না মৃত? রবিবার দিনভর এই জল্পনার মধ্যেই বিকেলের দিকে জইশ-ই-মহম্মদ-এর তরফে জানানো হয়, তাদের শীর্ষ নেতা জীবিত এবং সুস্থই আছেন। নতুন একটি খবরে, সেই সম্ভাবনা আরও জোরদার হল। রাওয়ালপিন্ডির সেনা হাসপাতাল থেকে মাসুদ আজহারকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে— গোয়েন্দা সূত্র উদ্ধৃত করে একাধিক সংবাদ মাধ্যম এই দাবি করেছে। ওই সূত্রের দাবি, রবিবার রাতেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গোঠ ঘানি এলাকার একটি জইশ জঙ্গি ঘাঁটিতে।
পুলওয়ামা কাণ্ডের পরই জানা যায়, সিআরপি কনভয়ে আত্মঘাতী জঙ্গি হানার মাস্টারমাইন্ড জইশ-ই-মহম্মদের শীর্ষনেতা মাসুদ আজহার। তখনই সামনে আসে, গত কয়েক মাস ধরে রাওয়ালপিন্ডিতে পাক সেনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন জঙ্গি নেতা। কিন্তু গতকাল রবিবার দিনভর জল্পনা ছড়ায় মাসুদ আজহারের মৃত্যু হয়েছে। কী ভাবে মৃত্যু, তা নিয়েও একাধিক সম্ভাবনা উঠে আসে। কারও দাবি, কিডনি বিকল হয়েই মৃত্যু হয়েছে জইশ প্রধানের। কোনও সংবাদ মাধ্যম আবার দাবি করে, ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বায়ুসেনার হামলায় মৃত্যু হয়েছে মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি নেতার। যদিও জইশ, পাক সরকার বা ভারত, কোনও তরফেই এ খবর নিশ্চিত করা যায়নি। জইশের তরফে দাবি করা হয়, 'ভারতীয় বায়ুসেনার হামলায় জইশ জঙ্গিদের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।'

সেই জল্পনা এখনও চলছে। তার মধ্যেই রবিবার রাতের দিকে নতুন খবরে মাসুদ আজহার জল্পনা অন্য মোড় নিল। গোয়েন্দা সূত্র উদ্ধৃত করে একাধিক সংবাদ মাধ্যমের দাবি, রবিবার রাত ৭.৩০ নাগাদ রাওয়ালপিন্ডির সেনা হাসপাতাল থেকে জইশ জঙ্গি নেতাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাকে রাখা হয়েছে গোঠ ঘানি এলাকার একটি জইশ জঙ্গিদের ঘাঁটিতে। সংবাদ মাধ্যমে উদ্ধৃত ওই গোয়েন্দা সূত্রের আরও দাবি, পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার পর পাকিস্তানের স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসপিজি)-র অন্তত দশ জন কমান্ডো দিয়ে জইশ প্রধানের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করা হয়েছিল।
আরও পডু়ন: বায়ুসেনার অভিযানে পাকিস্তানে হত ২৫০, এ বার 'সূত্র' দিলেন অমিত শাহ
এর পরই আবার একাধিক জল্পনা, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে কি কিডনির সমস্যা কাটিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে স্থানান্তর? সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার পুলওয়ামা হামলার পর আন্তর্জার্তিক মহলে ব্যাপক চাপে পড়েছে পাকিস্তান। সেনা হাসপাতালে জঙ্গি নেতার চিকিৎসা বা আশ্রয় দেওয়ার অর্থ যে সরাসরি সন্ত্রাসে মদত দেওয়া, সেটা বোঝার জন্য কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। আবার মাসুদ আজহার যে পাকিস্তানেই আছে, তাতে সিলমোহর দিয়েছেন খোদ পাক বিদেশমন্ত্রী। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে চাপ বাড়ছিল, এবং সেই চাপেই পাক সরকার শেষ পর্যন্ত মাসুদ আজহারকে সেনা হাসপাতাল থেকে সরানোর নির্দেশ দিতে পারে। এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কূটনৈতিকরা।

আবার আজহারকে সরানোর পরই একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে জইশ জঙ্গিদের তরফে।  সেই বিবৃতিতে দ্বিতীয় সম্ভাবনার দিকেই ইঙ্গিত করেছে জঙ্গি সংগঠন। তাতে বলা হয়েছে, আমেরিকায় ৯/১১ হামলার পর মুশারফ যে ভাবে আন্তর্জাতিক চাপের কাছে মাথা নত করেছিল, ইমরান খানও সেই নীতি অনুসরণ করছেন। জইশের বক্তব্য, ''ভারতীয় বায়ু সেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দিয়েছেন ইমরান। এখন মাদ্রাসা, মসজিদের মতো প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে সরকার। তারা শত্রুর (ভারত) বিরুদ্ধে নমনীয়, কিন্তু নিজেদের নাগরিকদের (জইশ) প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছে।''

পাশাপাশি যে কোনও সময় স্থানান্তরের জন্য জঙ্গি সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। ফলে জইশের বিবৃতিও মাসুদ আজহারকে হাসপাতাল থেকে সরানোর দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। একই সঙ্গে মাসুদ আজহারের যে মৃত্যু হয়নি, এবং তিনি জীবিত রয়েছেন, সেই সম্ভাবনাও জোরদার হচ্ছে। জইশের বিবৃতি এই প্রশ্নও উস্কে দিয়েছে, অন্তত চাপে পড়েও কি ইমরান খান শেষ পর্যন্ত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে চলেছেন?