৬০০ কিলোমিটার দূরে বদলি প্রাথমিক শিক্ষককে


কোচবিহারের ঘোকসাডাঙ্গা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক রণধীর দাসকে বদলি করা হয়েছে মুর্শিদাবাদের ভরতপুর দক্ষিণের কান্দ্রা মিল্কি পাড়া প্রাথমিক স্কুলে। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর থেকে শিক্ষকতা করা রণধীর বৃহস্পতিবার জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের (ডিপিএসসি) রিলিজ অর্ডার হাতে পেয়ে রীতিমতো অবাক। চাকরি বাঁচাতে তাঁকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে যেতে হবে।

তাঁর কথায়, 'শুধু আমি একা নই। মাথাভাঙার ধীমান চৌধুরী ও তুফানগঞ্জের বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়কেও বদলির চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অবশ্য উত্তর দিনাজপুরের প্রাথমিক স্কুলে বদলি করা হয়েছে। দূরত্বের মাপকাঠিতে তা ৩০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি।' একই ভাবে পূর্ব বর্ধমানের গলসির প্রাথমিক শিক্ষক হিরন্ময় মণ্ডলকে বদলি করা হয়েছে মালদহের হরিশচন্দ্রপুরে। দূরত্বের নিরিখে ৩৫০ কিলোমিটারের বেশি। পূর্ব মেদিনীপুরের ২০১০ সালে শিক্ষকের নিয়োগপত্র পাওয়া আমজাদ আলিকে পাঠানো হয়েছে পুরুলিয়ায়। মালদহের মানস গোস্বামীকে আবার বদলি করা হয়েছে আলিপুরদুয়ারে। এতে চরম বিপাকে ওই শিক্ষকরা।
কেন এত দূরে বদলি?

এ নিয়ে কুলুপ এঁটেছেন স্কুলশিক্ষা দপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং সংশ্লিষ্ট জেলার আধিকারিকরা। বদলির রিলিজ অর্ডার হাতে পাওয়া শিক্ষকদের দাবি অন্য। তাঁরা জানান, উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন। রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সর্বভারতীয় প্রাথমিক শিক্ষকের বেতন কাঠামোয় আনতে আন্দোলন করছিলেন তাঁরা। সে কারণেই বদলি। সর্বভারতীয় বেতন কাঠামোর তুলনায় এ রাজ্যে একজন প্রাথমিক শিক্ষক কর্মজীবনের শুরুতে মাসে ন্যূনতম ১২ হাজার টাকা বেতন কম পান। রণধীর বলেন, 'আমি সংগঠনের কোচবিহার জেলার সভাপতি ছিলাম। ধীমান জেলা আহ্বায়ক আর বিপ্লব তুফানগঞ্জ ব্লকের দায়িত্বে ছিল। যা আমার যা অবস্থা, সপ্তাহে একদিন বাড়ি আসাও কঠিন হয়ে পড়ল।' হিরন্ময়ের কথায়, 'এখন জানি না, কী হবে। আমার বিধবা মা গুরুতর অসুস্থ। ৯ বছরের সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী একা। অবিলম্বে বদলি হওয়া স্কুলে যোগ দেওয়ার জন্য জানানো হয়েছে। এখন কী যে করি!'

বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, কোনও শিক্ষককে প্রশাসনিক কারণে আদৌ এত দূরে বদলি করা যায় কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। শুধু তাই নয়, বদলির চিঠি প্রাপকদের মধ্যে কয়েকজন নাকি প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকা। ডিপিএসসি বা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক-ডিআই) এবং এসআইরা কী জেলার মধ্যে বদলির নির্দেশ দিতে পারেন? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা যায়নি। তবে দীর্ঘদিন স্কুলশিক্ষা দপ্তরের প্রাথমিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক জানান, বিকাশ ভবন ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অনুমোদনেই এই বদলি কার্যকর হয়েছে। সিপিআইয়ের শিক্ষক নেতা স্বপন মণ্ডল জানান, 'অবিলম্বে এই বদলির নির্দেশিকা প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে রাজ্যজুড়ে লাগাতার আন্দোলন হবে। প্রয়োজনে আদালতেও যাব।' প্রাথমিক শিক্ষক নেতা ভীমসেন বিশওয়াল জানান, এটা রাজনৈতিক কারণে করা হয়েছে।