সম্পত্তির লোভে জীবিত মামীকে ২০ বছরের ‘মৃত’ বানিয়ে ফেলল ভাগ্নী !

সেই শংসাপত্র, ডান দিকে, শাশ্বতী দাস। 

বিবাদটা ছিল দেড় একর ফলন্ত জমি নিয়ে। আর, তার জেরেই নিজের মামীমাকে 'মৃত' প্রতিপন্ন করতে আঙুল কাঁপা দূরে থাক, সরকারি দফতরে তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্র পাঠাতেও পিছপা হননি ভাগ্নী।  যাতে স্পষ্ট করা হয়েছে, পাক্কা বিশ বছর আগে মারা গিয়েছেন শ্বাশতী দাস। 

শুক্রবার ফরাক্কা থানায় সশীরে হাজির হয়ে শ্বাশতী নিজেকে শুধু 'জীবিত' বলেই প্রমাণ করেননি, ফরাক্কা ব্লকের বিএলএল আরও তরুণ কুমার দাস, ব্লকের রেভিনিউ অফিসার সুব্রত মৃধা, অর্জুনপুরের পূর্বতন প্রধান বিশাখা মন্ডল-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। 
পুলিশের সামনে হাজির হয়ে বছর ষাট বয়সের ওই মহিলা দেখান তাঁকে ২০ বছর আগেই মৃত দেখিয়ে তাঁর প্রায় ২০ লক্ষ টাকার সম্পতি গত দু'সপ্তাহের মধ্যে বেমালুম গায়েব করেছে ভাগ্নী মৌসুনী রায়। পুলিশ এ ব্যাপারে বিএলআরও কর্তা-সহ অভিযুক্ত সাত জনের বিরুদ্ধে এ দিন  জামিন অযোগ্য ৪২০ ও ৪০৬ ধারায় মামলা রুজু করেছে। বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা মৌসুমীর খোঁজে রওনা দিয়েছে পুলিশ। তলব করা হয়েছে ভূংমি রাজস্ব দফতরের কর্তা এবং প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানকেও।

পুলিশ জানায়, ফরাক্কার শিবনগরের বাসিন্দা শাশ্বতী। স্বামী-পুত্র নিয়ে তাঁর ভরা সংসার। তাঁর নামে শিবনগরের বাড়ির লাগোয়া এলাকায় ১০৭৭ খতিয়ান ও ২১১ নম্বর দাগে ১.১৩ একরের বিস্তৃত বাগান রয়েছে। শাশ্বতীই তাঁর মালকিন। পারিবারিক সেই সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরেই শাশ্বতীকে ২০ বছর আগে মৃত দেখিয়ে নথিপত্র বদলের অভিযোগ উঠেছে। 
সেই নথিতে নির্দ্ধিদায় সিলমোহর দিয়েছেন বিএলএলআরও তরুণ দাস এবং রেভিনিউ অফিসার সুব্রত মৃধা। তরুণবাবু বলছেন, "আমাদের কাছে অর্জুনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিশাখা মন্ডলের সই করা একটি শংসাপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে শাশ্বতীদেবী মারা গিয়েছেন ২০ বছর আগে। তিনি মৃত কি জীবিত তা যাচাই করে আর দেখিনি। ভুল হয়েছে এটাই।''

কিন্তু রেকর্ড বদলের নিয়ম অনুযায়ী পূর্বতন মালিকের বাড়িতেও ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে নোটিস পাঠানোর কথা।  
এই রেকর্ড বদলের সুপারিশ করে রায় লিখেছেন রেভিনিউ অফিসার সুব্রতবাবু। তাঁর নির্বিকার জবাব, ''এত ব্যস্ততার মধ্যে কাজ করতে হয় কি বলব! সবসময় নোটিস পাঠানো সম্ভব হয়না। প্রধানের দেওয়া শংসাপত্রকেই বিশ্বাস করতে হয়। এক্ষেত্রেও সেটাই করা হয়েছে।'' তাঁর দাবি, ভুল হয়ে থাকলে শাশ্বতী উচ্চ পর্যায়ে আপিল করতে পারেন।
শাশ্বতীর অভিযোগ, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে কোনও বিবাদ থাকলে  আদালত রয়েছে। তিনি বলেন, ''তা বলে আমাকে মৃত দেখিয়ে জালিয়াতি করে সবটাই দখল করবে!'' তাঁর দাবি, এ ব্যাপারে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অভিযুক্ত দুই কর্তার সঙ্গে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করে অত্যন্ত দ্রুত এ কাজ করা হয়েছে। 
শাশ্বতীর স্বামী স্বপন বলছেন, "মৌসুমী সম্পর্কে আমার ভাগ্নী। পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ ছিল বটে, তা বলে এমন যে করতে পারে ভাবিনি।'' তাঁর অভিযোগ, ডিসেম্বর থেকেই মালিকানা বদলের চেষ্টা করছে মৌসুমী। কিন্তু ভূমি দফতরের নোটিস পেয়ে হাজির হওয়ায় তা খারিজ হয়ে গিয়েছিল আগে। এ বার ফের তা জাল করে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে সে।