আমি নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য নই, বললেন ইমরান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। 

ভারতীয় বায়ু সেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তের পরই ইমরান অনুগামীদের উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই। ইমরান খানকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার দাবি শুধু নয়, রীতিমতো পাক পার্লামেন্টে প্রস্তাব আনা হয়েছে। সেই বিতর্কে এ বার ইমরান নিজেই মুখ খুললেন। টুইটারে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ''আমি নই, যিনি শান্তি প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ করেছিলেন তিনিই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার দাবিদার।''

সূত্রপাত কী ভাবে? কেনই বা হঠাৎ ইমরান খানকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রসঙ্গ এল? একটু পিছনের দিকে ফিরে তাকানো যাক। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পাক যুদ্ধবিমান এফ-১৬ ধাওয়া করা, তার পর পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাক সেনার হাতে অভিনন্দন বর্তমানের ধরা পড়ার ঘটনা থেকেই সূত্রপাত। তার পর পাক সরকারের সিদ্ধান্তে অভিনন্দন ভারতেও ফিরে এসেছেন। তার পর থেকে দু'দেশের কূটনৈতিক বাতাবরণ কিছুটা শান্ত। যুদ্ধ-যুদ্ধ আবহও উধাও।

পাকিস্তানের দাবি, অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে কাশ্মীর ইস্যু এবং উপত্যকায় শান্তির পথে অগ্রদূতের ভূমিকা নিয়েছেন ইমরান। দিল্লি-ইসলামাবাদের উত্তেজনা কমাতে শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ করেছেন। আর এখান থেকেই উঠে আসে ইমরান খানকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হোক। শুধু এই দাবিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে শনিবার পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা পাক সংসদে রীতিমতো এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, নয়াদিল্লি-ইসলামবাদের উত্তপ্ত বাতাবরণ শান্ত করার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হোক।

এর পর থেকেই টুইটারে এ নিয়ে ব্যাপক তরজায় মেতেছেন নেটিজেনরা। রীতিমতো ট্রেন্ডিং #নোবেলপিসপ্রাইজফরইমরানখান। সেই সূত্রেই এ বার হাল ধরলেন ইমরান নিজেই। টুইটারে তিনি লিখেছেন, আমি নোবেল শান্তি পুরস্কারের দাবিদার নই। তিনি যোগ্য, যিনি কাশ্মীরের বাসিন্দাদের ইচ্ছানুসারে কাশ্মীর বিতর্কের সমাধানের চেষ্টা করেছেন এবং এই উপমহাদেশে শান্তি ও উন্নয়নের পথে প্রথম পদক্ষেপ করেছেন।'' এ কথা বলে আসলে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফওয়াদ চৌধুরিকেই ইঙ্গিত করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। কারণ অভিনন্দনকে ভারতে ফেরানোর জন্য পাক সংসদে প্রস্তাব এনেছিলেন এই ফওয়াদ চৌধুরিই।

কিন্তু এই দাবির যৌক্তিকতা কোথায়? কূটনৈতিক শিবিরের দাবি, অভিনন্দনকে ফেরত পাঠিয়ে পাকিস্তান যে শান্তির বার্তা দিয়েছে বলে কৃতিত্ব দাবি করেছে, তার পিছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে। আসলে পাকিস্তান কার্যত অভিনন্দনকে ফেরাতে বাধ্য ছিল। কারণ, আন্তর্জাতিক মহলের প্রবল চাপ এবং জেনেভা কনভেনশনের শর্ত। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় হামলার পর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ নতুন করে জোরদার হয় আন্তর্জাতিক মহলে। ভারত তো বটেই, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্সের মতো দেশ থেকে ইমরানকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়। তার উপর ছিল ভারতের প্রত্যাঘাতের ভয়।
এই উভয়সঙ্কট থেকে মুক্তির পথ খুঁজছিল পাকিস্তান। সেই পরিস্থিতিতেই কার্যত দেবদূতের মতো অভিনন্দনকে হাতে পেয়ে যায় পাকিস্তান। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন ইমরান। কিন্তু সেই চাপ 'বাধ্যবাধকতা' এবং নিজেদের মুক্তির 'সুযোগ'কেই পাকিস্তান এখন 'শান্তির বার্তা' হিসেবে তুলে ধরে আন্তর্জাতিক মহলে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, ইমরান বা ফওয়াদের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাবেন কি না, সেটা মূল বিষয় নয়। আসলে এই ধুয়ো তুলে নিজেদের সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক এবং মদতদাতার তকমা ঝেড়ে ফেলতেই সুকৌশলে এই প্রচার ছড়ানো হচ্ছে।