৮ সাংসদ বাদ, এ বারও মমতার প্রার্থীতালিকায় বেশ কিছু চমক


প্রার্থীতালিকায় বেশ বড়সড় চমক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৮টি-তেই এ বার নতুন প্রার্থী দিল তৃণমূল। টিকিট দেওয়া হল না ৮ বিদায়ী সাংসদকে। অন্য এক বিদায়ী সাংসদের আসন বদলে দেওয়া হল। ২০১৪ সালে বাংলায় যে ৮ আসনে হেরেছিল তৃণমূল, তার মধ্যে ৭টিতেই বদলে দেওয়া হল প্রার্থী। তালিকায় কমল তারকার সংখ্যা। দুই মন্ত্রী-সহ মোট ৭ বিধায়ককে নামিয়ে দেওয়া হল লোকসভা ভোট লড়তে। এক রাজ্যসভা সাংসদকে এবং কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যানকেও লোকসভার ভোটযুদ্ধে হাজির করা হল।

বিদায়ী সাংসদদের মধ্যে মমতা এ বার টিকিট দিলেন না সুব্রত বক্সী, ইদ্রিস আলি, সুগত বসু, সন্ধ্যা রায় এবং তাপস পালকে। টিকিট পেলেন না তাপস মণ্ডল, উমা সরেন, পার্থপ্রতিম রায়। দুই সাংসদ সৌমিত্র খান এবং অনুপম হাজরা কিছু দিন আগেই দল থেকে সাসপেন্ড হয়েছেন। দু'জনেই এখন বিজেপিতে।

নতুন প্রার্থীদের মধ্যে আছেন টলিউডের দুই জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান। ১০ বছর পর আবার লোকসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিটে লড়বেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সুব্রতর পঞ্চায়েত দফতর চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের হাতে দেওয়া হল বলে সাংবাদিক সম্মেলন থেকেই ঘোষণা করেন মমতা।

মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে মানস ভুঁইয়ার মতো হেভিওয়েটকে প্রার্থী করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইলেন যে, প্রতিপক্ষের প্রার্থী যে-ই হন, কোনও আসনেই লড়াইকে হালকা ভাবে নেওয়া হবে না। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রার্থী হতে পারেন মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে— জল্পনা জোরদার। প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি, সবংয়ের ছ'বারের বিধায়ক, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্তমানে তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভায় যাওয়া মানসকে সেই মেদিনীপুরে প্রার্থী করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন, রাজ্য বিজেপির সভাপতিও যাতে জিততে না পারেন, তৃণমূল তা নিশ্চিত করার সব রকম চেষ্টা করবে।

কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পাল, রানাঘাটের সাংসদ তাপস মণ্ডল, মেদিনীপুরের সন্ধ্যা রায়, ঝাড়গ্রামের উমা সরেন, বসিরহাটের ইদ্রিস আলি, কোচবিহারের পার্থপ্রতিম রায়কে এ বার টিকিট দেয়নি তৃণমূল। তাঁদের অধিকাংশকেই অন্য কোনও কাজে লাগানো হতে পারে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন। দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ সুব্রত বক্সী নিজেই দাঁড়াতে চাননি, দলের কাজে বেশি সময় দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন— জানিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। যাদবপুরের সাংসদ সুগত বসু আমেরিকায় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন, সেখানকার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বার আর তিনি ভোটে দাঁড়ানোর অনুমতি পাননি, তাই লড়বেন না— এ কথাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান। আর বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খান এবং বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরা দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন বিজেপি-তে, তাই ওই দুই আসনে নতুন প্রার্থী ঘোষিত হওয়া অবধারিতই ছিল।

প্রার্থীতালিকায় রাজনৈতিক মুখের সংখ্যা বাড়াতে গিয়ে সাংসদ, বিধায়ক বা অন্য কোনও স্তরের জনপ্রতিনিধিদের লোকসভার টিকিট দেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে দু'জন আবার রাজ্যের মন্ত্রী। এক জন হলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, যাঁকে বাঁকুড়ায় লড়তে পাঠিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। সুব্রতর পঞ্চায়েত দফতর চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সামলাবেন বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। কোতুলপুরের বিধায়ক তথা আর এক মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরাকে টিকিট দেওয়া হয়েছে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে।

এ ছাড়া করিমপুরের তৃণমূল বিধায়ক মহুয়া মৈত্র টিকিট পেয়েছেন কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে। দার্জিলিঙের মোর্চা বিধায়ক অমর সিংহ রাই জোড়াফুলের টিকিট পেয়েছেন দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে সামিল হওয়া তিন বিধায়ক আবু তাহের, অপূর্ব সরকার এবং কানাইয়ালাল আগরওয়াল জোড়াফুলের টিকিট পেয়েছেন যথাক্রমে মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর ও রায়গঞ্জ লোকসভা আসনে। কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যান মালা রায়কে দক্ষিণ কলকাতায় প্রার্থী করেও কিছুটা চমক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন।

যে ৮টি আসনে ২০১৪-র নির্বাচনে হেরেছিল তৃণমূল, সেগুলির মধ্যে একমাত্র মালদহ দক্ষিণে প্রার্থীর নাম অপরিবর্তিত— মোয়াজ্জেম হোসেন। কিন্তু বাকি ৭টিতেই অর্থাৎ দার্জিলিং, রায়গঞ্জ, উত্তর মালদহ, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর, বহরমপুর এবং আসানসোলে এ বার দলের মুখ বদলে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।